কার্তিকের কুয়াশা

সার্ধশতবর্ষ পরে
পার্থসারাথি ভৌমিক
কলকাতা, ভারত

''হৃদয়মাহ মঝু জাগসি অনুখন''-
আজকেও আমি তোমাকে প্রানিক -এ চাইছি প্রাণপণ।

''আঁখউপর তুঁহু রচলহি আসন''-
আজকেও তুমি আমাকে প্রানিক -এ ছুঁচ্ছ অনুখন ।

''আজি হ'তে শত বর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহলভরে ,...... ''
তুমি লিখেছিলে ।
তোমার পরে
এসেছেন শঙ্খ, সুনীল .........।
' সূর্যাবর্ত ' সংকলনে
শঙ্খধ্বনি ওঠে -
যদিও যৌবনে
সুনীল ' অসম্ভব ভালো '
হ'তে চেয়ে
ক' জোড়া পায়ের আঘাতে
' সঞ্চয়িতা ' ঠেলেছে পাপোশে ।
সেই তিনি
যৌবন পার হ'য়ে
স্বীকার করেছেন তোমায়
নির্দ্বিধায় ।
'' খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর '',
যেমন বুদ্ধদেব -ও
অবশেষে তোমায় ।

তোমার ' মঞ্জুলী '-রা
ভালো আছে ।
পুরুষশাসিত সমাজ
আজ তাদের ভয় পায় ।
' বিনু ' -কে
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার
লজ্জা , দ্বিধা , গ্লানি
''সেই দু মাসের অর্ঘ্যে ''-র কাছে
আজও ঋণী ।
কুলি -বউ ' রুকমিনী '
বরং আজও নিখোঁজ ।
কোথাও কোথাও নিশ্চয় -ই
' সাধারণ মেয়ে '
' মালতী ' র কাছে
বরাবরের জন্যে
ফিরে আসে
' লিজি ' র বুকে
মুখঘষা প্রেমিকপুরুষ ।
' কমলা ' -রা আজও
আহত ক'রে যায়
দাম্ভিক পুরুষ -কে ।
ভাগ্যিস ' ক্যামেলিয়া '
আজকেও ফোটে !
তাই ' তনুকা ' -রা
সসম্মানে বাঁচে !
' সাঁওতাল মেয়ের ' সাজ
রূপ -কে করে রূপক ।
তোমার ' শেষ চিঠি '
তোমার ' বিসর্জন ',
তোমার সাহসী আঁকা
কুরূপ বাস্তব ।
যেমন -
'' ঢাকিরা ঢাক বাজায় খালে বিলে '' ।

সার্ধশতবর্ষ পরে-
আজ বর্তমান
একটি দিনের রেখায় ,
অথবা কয়েক শত ,
কিম্বা আরও শত সহস্র
বছর পরে-
তুমি কত দূরে -
অব্যক্ত রেখেছ ।
আমি জানি
আগামী অনন্ত
তুমি আছ-
'' বাঁশীর সুরের দুরত্বে ''-
শব্দতরঙ্গের ' শেষ সপ্তক '-এ ।

'' সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর ''-
''এক চরম সংগীতের গভীরতায় ''-
তোমার ' ভৈরবী গান '।।
****

কে আমি?
কোয়েল সাহা
২৬ আগস্ট,২০১১।
দুপুর ৩.৩০ঘটিকা
কলিকাতা,ভারত।

নিঝুম দুপুর, সাঁঝের বেলায়
রাতদুপুরের মাতাল কালোয়ে
লিখছি আমি,একাকী
নীল সবুজের অবুঝ মিল
দর্শক আমি একাকী
পরিচিতির আরম্ভরে
নিরুদ্দেশে, একাকী
স্বচ্ছ সরল মনের
কথা জানাই ,আমি একাকী
নাম, কোয়েল, শুধুই কোয়েল
নদী আমি,নই পাখী।
***
কিছু নয়
-সাইফুজ্জামান
ঢাকা,বাংলাদেশ
 
কোন রেস্তরাঁ বা সেলুনে গেলে চারপাশের আয়না হেসে ওঠে কালো চুলের ভেতর সাদা চুল আর পেছনের চাঁদি ভেদ করে টাক দৃশ্যমান বয়স বেড়ে যাচ্ছে। ভুলে যাই ঠিকানা, মানুষের নাম, কার মুখ; চশমার পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। হাতের কাছেই হাসপাতাল, যেতে ইচ্ছে করেনা, বসে থাকি একাকী, পাশে পরে থাকে চশমা কলম নিয়ম করে গ্লুকোজ, চর্বি ইত্যাদি টেস্টের কাগজ ধরিয়ে দেয় ডাক্তার ভাবি সময় চলে যায়...কতদিন সবুজ দেখিনা; শুনিনা পাখির কিচিরমিচির মনের বয়স বাড়েনা। আমাদের চায়ের আড্ডায় নারী প্রাসঙ্গিক বিষয় সাদা চুল, চোখের ক্ষীণদৃষ্টি আর বকবকানির অভ্যাস নিয়ে চলাফেরা করি জাফলং।চট্টগ্রাম বিচ,গাজিপুরের অরণ্যের ডাকে বন্ধুরা যে যার জগতে ডুবে আছে খুব-দেখা হয়না আর সময় যত বলে টিক টিক; সময় যে যায়, বয়স বাড়ে লেখালেখি, সঙ্গীত, নানা ছাইভস্ম গেলা বাঁচিয়ে রাখে সাদাচুল। ক্ষীণ দৃষ্টি স্মৃতিবিভ্রম... ও সব কিছু নয়ই বাল্যস্মৃতি কাতরতা মগ্নতা থেকে উঠে সামনে তাকাও পার্ক এভিনিউ, নদির জলধারা, স্বজন, প্রিয়জনের কলতান ভুলিয়ে দেয় সব; এইভাবে বাঁচার নাম জীবন, জীবন ছোট। নয় দীর্ঘ। ***
বিশ্বাসের ভুলে
-লীমা জামান শিল্পী
সিলেট, বাংলাদেশ
 
তারপর কেটে গ্যাছে বহুদিন। সুখের সঙ্গ ছেড়ে
ইতি মধ্যেই স্বপ্ন গিয়েছে বহুদূর
কবেই ঝরে গ্যাছে সোহাগী অরণ্যের
সব ক’টি পাতা ফুল।
বসন্তদিন থেকে নির্বাসিত হয়ে নি:সঙ্গ কোকিল হৃদয়
এখনো কাঁদছে। দগ্ধ হচ্ছে ভেতর বাহির
জ্বলছে পুড়ছে পুড়ে পুড়ে কালো হচ্ছে সব
ফেটে ফেটে চৌচির হচ্ছে স্বপ্নময় সরল বিশ্বাস
তবু তো নি:শেষ হচ্ছেনা কিছুই
হচ্ছে না মিথ্যে প্রেমের সত্যি ভাঙ্গন।

***

মেঘবার্তা
গাজী তানজিয়া
ঢাকা বাংলাদেশ

আজ তোমার কবিতার বই ছুঁয়ে কি হলো জানি না
যা আমি কখনো করিনি, কখনো
করবো বলেও ভাবিনি - তাই করলাম..
ঠোঁট ছোঁয়ালাম তোমার কবিতায়!
ছিঁড়ে খুঁড়ে বের করে আনতে চাইলাম এক ভয়ংকর অতীত
কিংবা এক আদিমতম রূপ ভালোবাসার।

একটা সাড়ে-চার হাজার বর্গ-ফুটের জন-মানবহীন
শূন্য বাড়িতে বাস করি আমরা দুজনে
আমি ও তোমার কবিতার বই।

মাঝে মাঝে দূরাগত কোনো সমুদ্রের গর্জনের মতো
এসে হানা দাও তুমিও, তবে
শরীরে নয়, অস্তিত্বের গভীর থেকে।

হঠাৎ জেগে ওঠা এক ঝড়ের বাতাসে পাঠিয়ে দাও
তোমার অগ্নিময় উপস্থিতি
কর্ণ-কূহরে জিভের স্পর্শের কাঁপন ধরানো শিহরণ জাগায় সেই বার্তা সর্বাঙ্গে।

যে বার্তা হাওয়া গড়াতে গড়াতে মেঘ-
এরপর বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দেয় আমায়
আর কী অদ্ভুতভাবে ভিজে যাও তুমিও!

মুহূর্তে যেন আমরা গুহাবাসী মানুষের মতো
সভ্যতা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়া জয়মান জীব
দুজনের সর্বাংগ থেকে তখন বৃষ্টি ভেজা বনানীর সবুজ ঘ্রাণ।
রাতভর লুকোচুরি আর সহস্র চাঁদের বহ্নিময় গল্প,
সেই গল্পের রাস্তা ধরে আগ্নেয় প্লাবনে ডুবে যাওয়া-
এভাবে কেটে যায় যেন এক শতাব্দীকাল..!

আর একসময় হঠাৎ চমকে উঠে আমি আবিষ্কার করি
তোমার ঐ মেঘবার্তা তো শুধু জল নয়, ‘মাটি’-
নইলে এতো ফুল ফোটাও কী করে!

****

সীমাবদ্ধতার মধ্যে
-সাগর জামান

মাগুরা, বাংলাদেশ
 
ব্যক্তিগত কর্মপ্রবাহে উদয়াস্ত উধাও হয়
উৎসবের ছুটি নিয়ে সবাই ফিরে আসে
আমার ফেরাফিরি নেই।
একই বিন্দুতে অনড়দাড়িয়ে আছি।
সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমার পরিভ্রমন
পরিবর্তনহীন আমি দীর্ঘদিন।
আমার এই সীমিত পরিসর থেকে আহরিত আলো
কবিতাকে হয়তো আলোকিত করেনা আর
তবু ভালো তোমার প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশা নেই।
অন্বেষনের মিলিত আলোর বিস্ফোরন নেই
ভাঙ্গচুর,সৃষ্টির, প্রলয় নেই।
প্রকট হতাশার ভেতর ডুবসাঁতার আছে
পেছনে ফেলে আসা ধারালো হীরকের কতো নষ্টালজিয়া
আমাকে নতুন রঙের আলো চেনায়
আমি ভীন্ন আলোর চোখে তাকিয়ে
আমার সীমিত রঙের জগতকে
উদ্ভাসিত করি।

Share on Facebook