এবারের টিপস:
আধুনিক কবিও এ কথা ঘোষণা করেন যে 'কবিপ্রতিভার একমাত্র অভিজ্ঞানপত্র
ছন্দ:স্বাচ্ছন্দ্য' । যিনি এটা বলেছিলেন, সেই সুধীন্দ্রনাথ আর তাঁর
বন্ধু বিষ্ণু দে তো প্রকাশ্যেই গদ্যছন্দের প্রতি বিরূপ । এ কথাটা
পাঠক অনেক সময় ভুলে যান । তাই তিনি ভুলে যান যে গদ্যছন্দেই
আধুনিক কবিতার প্রাণ নয়, আধুনিক কবিতার পরিচয় বাক্ ছন্দে ।
~ শঙ্খ ঘোষ
জলে-স্থলে
পার্থসারাথি ভৌমিক
মুখবন্ধ
পুরনো জর্দার কৌটোতে
ভিজে জল- ন্যাকড়া ,
ক্ষয়ে ছোট্ট হ'য়ে যাওয়া একটা পেনসিল ,
আর বগলে স্লেট অহেতুক ছুট -
পাঠশালার নাম রাধাগোবিন্দ ।
দুই এক্কে দুই ,
দুই দুগুনে চার......
নামতার সমস্বরে সুরেলা পাঠ -
ঐক্যতান ।
অলস দুপুর ।
গঙ্গাফড়িং , পায়রা ধরা ,
লাল -নীল ঘুড়ি ,
মাঞ্জা দেওয়া -
ভো কাট্টা !!!
বনবাদাড় ।
পাখির মুখে কুটো !?
কয়েকদিন গোয়েন্দাগিরি ।
একদিন গাছে ,
ছ'ড়ে যাওয়া বুক বাধিয়ে-
হাতটা যদি আর একটু লম্বা হোতো '- আফসোস।
অ∫Iয় ! পাখির বাসা !
ওর ডিমের কোমল উষ্ণতা !
সন্তর্পণে স'রে আসা ।
উপজ্ঞা ।
জিওল গাছের আঠায় আটকে যাওয়া
আত্মম্ভরি ফিঙে ।
তাকে উদ্ধার ক'রে উড়িয়ে দিতেই-
শ্লাঘা ।
সংরক্ষণ' শব্দ -টা তখন
আমার জন্যে যুগান্তরে ছিল' ।
জলচৌকির কোণে
ঘরের খুঁটি বেয়ে
নিয়মমাফিক গম খেতে নেমে আসতো
কিচ কিচ ক'টা কাঠবিড়ালী ।
আমি যেন উদার আড়তদার ।
বেতফল ;
প্রাণীজ আঁশের মত খোসা ,
কি স্বাদ !
গাবের গায়ে হাত বুলিয়ে
এক দুর্জ্ঞেয় শৌখিনতা ,
যেন মখমল,
জিতে নিতাম ।
তীব্র লাল রঙের শরীরে
কুচকুচে কালো রঙের মুখ ;
কুচ-ফল ।
তা দিয়ে গাঁথা মালা
অমূল্য ছিল' ।
গোল্লাছুট, ফুলতোলাতুলি,
গাদি, চু-কিতকিত
কৌলীন্য ছিলোনা একটাতেও ।
দ্রুত শেষ হ'চ্ছে গ্রাম্য বিকেল !
সন্ধ্যেবেলা লণ্ঠনের আলো ।
নিয়ম করে বসা -
যতক্ষণ না মা কান টেনে ভুল ভাঙাতেন
তার আগে-
বই নয় , ঢুলে পড়া কাকে বলে-
অন্য কেউ শেখায় নি ।
রাত্তির ।
কি ঘুম পাচ্ছে !!!
কিন্ত বাবার সাথে মা'র
আজ খুব অশান্তি হয়েছে !
মাঝরাতে মা যদি......
মা'র আঁচলের খুঁট- এ
নিশ্চুপে নিজের আঙুল বেঁধে রাখতাম ।
এবার উঠতে গেলেই টের পাবো !
পরিশেষ
জুড়ে আছে পরবর্তী প্রজন্ম ।
ছুঁড়ে ফেলেছে
তিলে তিলে গ'ড়ে ওঠা অভিজ্ঞান ।
হাতে স্থলপদ্ম ।
সাথে তির্যক প্রশ্ন-
জলাশয় চিনতেই হয় ?
কে বলেছে ??
১৭।০৮।১১
হসপেট , কর্ণাটক
***
তুমিও............
কোয়েল বসু সাহা
প্রেমের কথা, জটিল তো নয়
সাদা সরল ভাষায়,
না’হয় হল এলোমেলো,
একটু ভালবাসায়।
জানবে তুমি, জানব আমি,
জানবে জগতময়।
ভালবাসা, শুধুই কি আর কথা দিয়েই হয়?
‘ভালবাসা’ কথা তো নয়,
চোখের কোলে জল...
পড়তে তাকে দেবই না তো
করুক টলটল।
তবু কেন, ভালবাসি; বলতে দ্বিধা হয়?
থাকুক এ ভয়,করব না জয়,
মনেই বলি আমি......।
আমার ভালো ভাবছ তুমি,
তোমার ভালো, আমি।
ঘুম জাগা ওই রাতের প্রহর সবচাইতে দামী।।
নাম শুধু নয়, তোমার তুমি, বাসছি ভালো আমি ও,
বুঝছি মনে, দিনে দিনে, ভালবাসছ তুমিও।
***
যদি এমন হত
কুনাল সীল
যদি এমন হত,আমি রোজ খালি পায় শিশির ভেজা ঘাসে হাটতাম
যদি এমন হত,আমি সাঝ পোহাল গান টা মুখস্ত করে ফেলতাম
যদি এমন হত,আমি কাল রাত্তির কালিমা নিয়ে নিশি ঘুম জাগতাম
যদি এমন হত,আমি লাল নিল ফুলের সাথে কথা বলতে পারতাম
যদি এমন হত,আমি তবে শেষ চোখ বোজা সার্থক করতে পারতাম
নাভিশ্বাস ফেলে দিয়ে রাতের আগুন জ্বেলে
মৃত্যুর সাথে অঙ্ক কষে দিতেম তাকে ঠেলে
বেঁচে থেকে আমি যদি বেছে নিতাম তাকে
লাল পরীর ওই নিল বিষ তাকে গলায় দিতেম ঢেলে
যদি এমন হত,আমি তাকে রাখতাম বুকে ঢেকে
চোখের জলে ভাসিয়ে তাকে দিতাম নাকো যেতে|
যদি এমন হত,আমি ঘুম থেকে উঠে,
আবার দেখি এলো চুলে এল ছাদে উঠে
আড়-চোখেতে হঠাত করে ধরা পড়ে গিয়ে
মলিন হাসির আমেজটাকে রেখে দিতাম চেপে
যদি এমন হত স্বপ্ন হয়ে মিলিয়ে যেতো সময়
জেগে উঠে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে নিতাম তাকে
কান্না চোখে বুকে ধরে ফুপিয়ে উঠত মন
সময় পাখি ফিরিয়ে দিতাম লাগত যত পণ
এবারে সব শেষে, নিজেতে নিছক হেসে
যদি এমন করে হারিয়ে যাওয়া যেতো
নিশ্চিহ্ন করে মন ,অবহেলায় সারাক্ষণ
যদি এমন হত, সে আমায় আবার খুঁজে পেত..
***
পৃথিবিটা একটা লাস
আবদুল হাকিম
ক্লার্কস লেইন, বাল্টিমোর, ইউ এস এ
[কবিতাটিতে ঈ, ঊ, ণ, ং, শ –এ পাঁচটি অক্ষর ব্যবহার করা হয়নি]
পৃথিবিটা এখন একটা লাস।
মানুষগুলো সব সকুন,
নয়তো উন্মাদ কুকুর।
ক্ষুরধার দাত আর নখের
আঘাত।আঘাত।
বারুদের ঝাঝ। পচা রক্তের দুর্গন্ধ।
এপার। ওপার।
মানুষ।
তুমি পিছনে ফেললে
রক্ত পিসাচ। হায়নাকেও।
গোলাপ।
তুমি আর ফুটে থেকো না।
মদিরাক্ষি।
বৃথাই তোমার চেয়ে থাকা।