সম্পাদকের ডেস্ক থেকে
প্রিয় পাঠক মন্ডলী,
শুভ নববর্ষ l বাংলা নববর্ষের আগমনে প্রকাশিত হলো কার্তিকের কুয়াশার সপ্তম
সংখ্যা। নববর্ষের আনন্দঘন উতসব উতসব আমেজে আমাদেরও তাই এই প্রকাশনার আয়োজন।
বাংলা সন শুরু হয় বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে, যে দিনটি ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৫ ই
এপ্রিল (ভারতে) এবং ১৪ ই এপ্রিল (বাংলাদেশে)। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করি বাংলা
নববর্ষের ইতিহাস খুব কম বাঙালিরই জানা । জানার আগ্রহীদের সংখ্যা হয়তো আরো কম।
ইতিহাস আজকাল আর সেরকম অর্থবহ নেই l কিন্তু তারপরও ইতিহাসের প্রয়োজন বাতিল করে
দেয়া যায় না।
একটু পিছনে মুখ ফেরাই। বৈদিক সৌর পঞ্জিকার সময় তখন। এটি ‘সূর্য সিদ্ধান্ত’
নির্ভর জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক গণনা পদ্ধতি দ্বারা নিরূপিত পঞ্জিকা। এর সাথে
বাংলা পঞ্জিকার যোগসূত্র অত্যাধিক। সম্রাট আকবরের শাসন আমলে হিজরী পঞ্জিকা
অনুযায়ী কৃষকের খাজনা আদায় ছিল প্রচলিত প্রথা। কিন্তু চন্দ্র বৎসর নির্ভর এ
পঞ্জিকা দিয়ে বিশেষ সুবিধা হচ্ছিল না। বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য সৌর বৎসর অনুযায়ী
তার পর্যায়কাল অতিক্রম করে বার বার একই সময়ে ফিরে আসলেও চান্দ্র বৎসরের সাথে
সমান্তরাল চলতে পারে না। প্রতি বছরে ১১ দিনের তফাত দেখা দেয় । কারণ চান্দ্র
বৎসর সমাপ্ত হয় ৩৫৪ দিনে যা সৌর বৎসর হতে ১১ দিন কম। সম্রাট আকবর তার দরবারের
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ সিরাজীকে দায়িত্ব দিলেন হিজরী
চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার । তৈরী হলো নতুন বাংলা
বর্ষপঞ্জী। যদিও ইংরেজী ১৫৮৪ সাল তখন, সম্রাট তাঁর সিংহাসনে আরোহণের বছরকে
স্মরণীয় করে রাখতে নতুন বাংলা পঞ্জিকার গণনা ১৫৫৬ থেকে শুরুর নির্দেশ দিলেন।
সিংহাসনে আরোহণের সেই সময়ে হিজরী সন ছিল ৯৬৩ হিজরী। মুহররম মাসকে পঞ্জিকার
প্রথম মাস ধরে বঙ্গাব্দের প্রথম বছরের গণনা সূচিত হলো। এবং তারও ক্রমানুসার
হিজরী সনের সাথে মিলিয়ে করা হলো ৯৬৩ বঙ্গাব্দ। তারপর হতে আজ অব্দি ৪৫৬ বছর কেটে
গেছে। নতুন বছরের প্রথম দিনের নতুন প্রভাতে ১৪১৯ বঙ্গাব্দের সূচনা ঘটেছে। এই
পঞ্জিকা কৃষকের ফসল তোলা, খাজনা আদায় ও কৃষিকাজ ভিত্তিক হিসাব নিকাশের সাথে
সম্পর্কিত। তা সত্ত্বেও বাংলা নববর্ষের আগমন বাঙ্গালীর জীবনে এখন শুধু হিসেবেরই
ব্যাপার নয়, একটি আনন্দেরও ব্যাপার। বাংলা নববর্ষ উদযাপন তাই বাঙ্গালীর
সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
কালের চক্রে আবারো নববর্ষ আসবে। সেই সময়টুকু পর্যন্ত ১৪১৯ এর শুভ কামনা রইলো
আপনাদের সকলের কাছে।
হুমায়রা হারুন
১লা বৈশাখ ১৪১৯ বঙ্গাব্দ
editor@kartiker-kuasha.nauba-aloke-bangla.com