মানুষের উন্নতি
বুয়া ( প্রণব রায় চৌধুরী )
আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ‘ উন্নতি ’ শব্দটি প্রায়শঃই ব্যবহার করি । চাষের
উন্নতি , শিল্পের উন্নতি , কৃষ্টির উন্নতি , ভাষার উন্নতি , দেশের উন্নতি ,
মানুষের উন্নতি ইত্যাদি । কোন জিনিষের উন্নতি – তা সে চাষই হোক আর শিল্পই হোক
বা অন্য কিছু – বলতে আমরা সাধারণতঃ বুঝি আগের তুলনায় আরও বেশী ভাল মানের আরও
বেশী পরিমাণে সেই জিনিষের উৎপাদন , কিন্তু তাহলে মানুষের উন্নতি বলতে কি বোঝাবে
? আমরা অনেক সময়েই বলি কোন মানুষ ব্যাক্তি হিসাবে বা কোন মানুষের গোষ্ঠি বা কোন
দেশের মানুষ বা কোন সময়ের মানুষ , অন্য কোন ব্যাক্তি , অন্য কোন গোষ্ঠি , অন্য
দেশের মানুষ বা অন্য সময়ের মানুষ অপেক্ষা বেশী বা কম উন্নত । এই উন্নতি বলতে কি
বোঝান হয় ? আর এই উন্নতির মাপকাঠিই বা কি ? মানুষের বা যে কোন প্রাণীর যখন
সহজাত প্রবৃত্তি যতটা – পারা – যায় সুখে বাঁচা এবং যতদিন - পারা - যায় বাঁচা ,
তখন মানুষের উন্নতি বলতে বোঝান উচিৎ কোন ব্যক্তিবিশেষের বা কোন গোষ্ঠির
প্রাগৈতিহাসিক প্রাথমিক অবস্থার প্রায় – বাঁদর – একটু – মানুষ অবস্থা থেকে
আজকের অবস্থার উত্তরণ , সুখে বাঁচা আর বেশী বাঁচার দৃষ্টিভঙ্গীর নিরিখে । অবশ্য
মানুষ যখন সামাজিক গোষ্ঠিভুক্ত জীব আর তার কার্য্যক্ষমতা তরুণ বয়সেই বেশী , তখন
ব্যাক্তি হিসাবে বেশী বাঁচার চেষ্টা থাকলেও গোষ্ঠি হিসাবে সব মানুষের কথা ভেবে
মানুষের বাঁচার সময় - বৃদ্ধি মানুষের উন্নতির লক্ষণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় । হয়ত
আগের তুলনায় মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে তবে তার কারণ চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি ,
খাদ্য উৎপাদনের উন্নতি , এক কথায় প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতার উন্নতি ।
আয়ু বেড়েছে বলে আমরা উন্নত হইনি , উন্নত হয়েছি বলেই আয়ু বেড়েছে । মানুষ কত সুখে
বাঁচছে সেটাই মানুষের উন্নতির মাপকাঠি হওয়া উচিৎ । এই আলোচনায় ‘ সুখের পরিমাণ
’কে উন্নতির মাপকাঠি হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে ।
যদি ‘ উন্নতি ’ এবং তার মাপকাঠি উপরের সঙ্গা অনুযায়ী হয় তবে উন্নতি করতে হলে
ব্যাক্তিবিশেষের বা গোষ্ঠির ‘ সুখের পরিমাণ ’ কে বাড়াতে হবে । তাই আমাদের ভাবতে
হবে কি ভাবে আমরা ‘ সুখের পরিমাণ ’ কে বাড়াতে পারি । যদি আমরা আমাদের পার্থিব
বস্তুলব্ধ আরাম বাড়াই তাহলেও আমাদের সুখ বাড়ে । আবার যদি আমরা মানসিকভাবে
আমাদের শান্তি বাড়াই তবেও আমাদের সুখ বাড়ে ।
মানুষের সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় মানুষ খোলা আকাশের তলায় জঙ্গলে বাস করতো অন্য
প্রাণীদের সাথে । সেই হেতু তাদের সব সময়েই নানা প্রাকৃতিক শক্তির যেমন প্রখর
সূর্য্য , তুমুল বৃষ্টি , ঝোড়ো হাওয়া , তীব্র শীত , প্রচন্ড গরম আর অন্যান্য
দুর্য্যোগের মোকাবিলা করতে হ’তো । তার ওপর আবার অন্য প্রাণী আর অন্য মানুষের
থেকেও আত্মরক্ষা করতে হ’তো । তাই , একসময় যখন তাদের কেউ গুহার প্রয়োজনীয়তা
আবিস্কার করলো আর তারা সবাই গুহায় বাস করতে লাগলো তখন এই ব্যাপারটাই তাদের
আরামকে অনেক বাড়িয়ে দিল আর তারা অনেক উন্নত হয়ে গেল । তারও কিছু বছর পরে তাদের
কেউ আবিস্কার করলো মাথার তলায় কোন পাথর বা কাঠ বা কিছু বস্তু রেখে শুলে ঘুমটা
ভাল হয় তখন এই বালিশের ব্যবহার তাদের আরামকে আরও বাড়ালো যা তাদের ‘ সুখের
পরিমাণ ’ কে বাড়ালো আর তারা আরও উন্নত হ’লো । আজকের দিনেও যদি আমি ব্যক্তিগত
গাড়িতে যাতায়াত করতে পারি আমার ‘ আরামের পরিমাণ ’ অন্য একজন ব্যাক্তি – যার
ব্যাক্তিগত গাড়ি চড়ার ক্ষমতা নেই এবং সরকারী / বেসরকারী বাসে / ট্রামে যাতায়াত
করে - তার তুলনায় বেশি । যাদের গাড়ি আছে তাদের ভিতরেও যার যত ভাল এবং আরামদায়ক
গাড়ি আছে তার আরাম তত বেশী । Mercedes Benz গাড়ির মালিকের আরাম Ambassador
গাড়ির মালিকের তুলনায় বেশী । তাই প্রথম ব্যাক্তির সুখের পরিমাণ বেশী হওয়ায় ,
তার দ্বিতীয় ব্যাক্তির তুলনায় উন্নত হওয়ার কথা ।
আবার কোন ব্যাক্তি আধ্যাত্মিক বা সেইরূপ কোন প্রক্রিয়ায় তার মানসিক শান্তি
বাড়াতে পারে , যা তার সুখের পরিমাণ বাড়ায় । ফলে সে হয় উন্নততর । তার তখন জাগতিক
বা বস্তুলব্ধ আরাম থেকে তেমন একটা সুখ বোধ হয় না যেমন হয় আধ্যাত্মিক বা মানসিক
সাধনায় । তাই কৌপিনধারী সাধূও – যার মানসিক শান্তির প্রাচুর্য্য অন্যদের তুলনায়
তার সুখের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে – অন্য লোকেদের তুলনায় উন্নত । যাই হোক ,
ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই যারাই মানসিক শান্তি বাড়িয়ে সুখ বাড়াবার রাস্তায়
উন্নত হওয়ার চেষ্টা করেছে হয় তারা হয় নিজেরাই সমাজ থেকে সরে গেছে বা সমাজ কোন
না কোনভাবে তাদের সমাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছে । সমাজে থেকে মানসিক শান্তি বাড়ানর
পথে উন্নতি করেছে বা করার চেষ্টা করেছে এমন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠি মানুষের ইতিহাসে
বা বর্তমান কালে কখনই পাওয়া যায় না । দু- একজনের নাম সমস্ত যুগের সমস্ত দেশের
ইতিহাস খুঁজে পাওয়া গেলেও তা ব্যাতিক্রম হিসাবেই গণ্য হবে । জনকরাজা ছাড়া আমরা
আর কোনও উদাহরণ ভারতীয় ইতিহাসে পাইনা যে সমাজে থেকে মানসিক শান্তি বাড়িয়ে সুখ
বাড়ানোর চেষ্টা করেছে । কিন্তু ইতিহাসে বুদ্ধ , চৈতন্য এবং আরও অনেক লোকের
পরিচয় পাই যারা মানসিক শান্তি বাড়াবার রাস্তায় পা বাড়াবার জন্য সমাজ ত্যাগ
করেছে । মানুষ যখন সমাজবদ্ধ জীব তখন সাধারণ মানুষ বলতে সমাজভুক্ত মানুষকেই
বোঝাবে , আর মানুষের উন্নতি বলতে সমাজভুক্ত মানুষের উন্নতি । তার জন্য তবে
উন্নতির রাস্তা একটাই – বস্তুলব্ধ আরামের পরিমাণ বাড়ান যা তার সুখের পরিমাণকে
বাড়াবে । দুঃখের বিষয় , আরাম বাড়িয়ে সুখের পরিমাণ বাড়ানো সীমাবদ্ধ । আর সেই
সীমা নির্ভর করে সেই অবস্থায় সেই মানুষের শান্তির পরিমাণের উপর ।
যে কোন এক অবস্থায় কোন মানুষের সুখের পরিমাণ নির্ভর করে তার সেই বস্তুলব্ধ
আরামের পরিমাণ আর মানসিক শান্তির উপর । গাণিতিক উদাহরণে আরাম আর শান্তি এই দুই
vector এর যোগফল সুখ । গাণিতিক নিয়ম অনুযায়ী আরাম বাড়লেও সুখ বাড়বে আবার শান্তি
বাড়লেও সুখ বাড়বে । তবে আরাম বাড়লে , বাড়ছে আরও একটা জিনিষ – দুশ্চিন্তা – যা
মানসিক তলে শান্তি কমিয়ে দিচ্ছে । তাই সুখ বাড়ানোর জন্য আরাম বাড়ালে যদি মানসিক
শান্তি অনেক থাকে তবে দুশ্চিন্তা বাড়ার জন্য শান্তি কিছুটা কমলেও পরিবর্তিত
আরাম আর শান্তি যে পরিবর্তিত সুখ সৃষ্টি করে তা আগের তুলনায় বেশী হয় । তবে
মুশকিল হয় যখন মানসিক শান্তির পরিমাণ কম থাকে , তখন আরামবাড়া – জনিত দুশ্চিন্তা
শান্তি এতটা কমিয়ে দেয় যে পরিবর্তিত আরাম আর শান্তির ফলস্বরূপ সুখ আগের তুলনায়
কমে যায় । ফলে উন্নতি তো হ’লই না বরঞ্চ অবনতি হ’লো ।
দুশ্চিন্তার ব্যাপারে আর আলোচনার আগে আরাম আর দুশ্চিন্তার সম্পর্ক সম্বন্ধে
সম্যক ধারণার জন্য কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক । আরামের পরিমাণ বাড়াতে হলে কিছু
বস্তু যা আরাম বাড়াতে সাহায্য করে তা আমাদের জীবনযাত্রায় যোগ করতে হবে কেননা
আরাম হল বস্তুলব্ধ ও দৈহিক । গরমকালে যদি আমাদের চারপাশে ফুরফুরে হাওয়া দেয়
আমাদের আরাম লাগে আর তা আমাদের সুখের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় । তাই সুখের পরিমাণ
বাড়ানোর জন্য আরামের পরিমাণবৃদ্ধির জন্য বাড়ির মধ্যে বদ্ধ ঘরে আমরা বৈদ্যুতিক
পাখা লাগাই যা ফুরফুরে ঠান্ডা না হ’লেও হাওয়ার একটা স্রোত সৃষ্টি করে যা আমাদের
আরাম দেয় , ফলস্বরূপ আমরা উন্নত হই । এখন দুশ্চিন্তার ব্যাপারটা দেখা যাক ।
পাখা চালাবার জন্য বিদ্যুতের দরকার । দেখতে হবে যাতে সবসময়ের জন্য বিদ্যুত
পাওয়া যায় ঘরের সুইচে । তার জন্য দরকার নানা সরঞ্জাম ও আয়োজনের যার জন্য দরকার
টাকা ও বন্দোবস্তের যার কিছু আমাদের ক্ষমতার মধ্যে , কিছু আমাদের ক্ষমতার বাইরে
। তারপরে আছে পাখা রক্ষনাবেক্ষণ ও সারাই , যন্ত্রাংশ বা প্রয়োজনে পুরো পাখার
পরিবর্তন যার জন্যও দরকার টাকা ও আনুষঙ্গিক আয়োজনের যা বেশীর ভাগ সময়েই আমাদের
মানসিক ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় । আবার আরও গন্ডগোল – কিছুদিন বাদেই আমরা হয়ে
যাব পাখার হাওয়ার ( নকল বাতাসের ) আরামে অভ্যস্ত । তাই যখনই কোনকারণে পাখা চলবে
না আমাদের কষ্ট অনেক পরিমাণে বেড়ে যাবে । সেইজন্য সবসময়েই আমরা চিন্তাগ্রস্ত
থাকবো এই ভাবনায় যে যখন আমাদের দরকার তখন পাখাটাকে ঠিক চালাতে পারবো তো । এইসব
ব্যাপার আমাদের মানসিক তলে আমাদের শান্তির পরিমাণের বিপরীত দিকে সৃষ্টি করে
দুশ্চিন্তার বা আশঙ্কার যা পরিবর্তিত শান্তির পরিমাণ কমিয়ে দেয় ।
গাণিতিক নিয়মে , যদি আমরা আমাদের আরামের পরিমাণকে x পরিমাণ বাড়াতে চাই কোন
বস্তু আমাদের জীবনযাত্রায় যোগ করে , তবে তা y পরিমাণের দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করবে
এবং আমাদের শান্তির পরিমাণ y পরিমাণ কমে যাবে । অঙ্কের জটিলতা কমানোর জন্য ,
যেহেতু x এবং y দুই বিভিন্ন তলে , যদি ধরা যায় তাদের তল একটা আর একটার উপর লম্ব
মানে বস্তুগত ( আরামের ) তল আর মানসিক তলের মধ্যেকার কোণ ৯০° , তবে যদি বর্তমান
আরামের ও শান্তির পরিমাণ A ও B হয় , তবে vector যোগফলে বর্তমান সুখের পরিমাণ
_________ _________________
√ A² + B ² এবং পরিবর্তিত সুখের পরিমাণ √ (A + x) ² + (B – y) ² যেখানে y = k
.x ( k – কোন অপরিবর্তিত সংখ্যা ) কেননা y বা দুশ্চিন্তাবৃদ্ধি x বা
আরামবৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল ও সমানুপাতিক । এর থেকে আমরা বুঝতে পারি কোন একটি
অবস্থায় সবচেয়ে বেশী সুখ এবং তার জন্য যে আরামের পরিমাণ প্রয়োজন দুইই সীমাবদ্ধ
এবং উভয়েই আবার শান্তির পরিমাণের উপর নির্ভরশীল ।
এখন , প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের আরামের জন্য তার নিজের তৈরী কোন জিনিষই ছিল
না আর তার শান্তির পরিমাণ ছিল সর্বাধিক । সুতরাং প্রথমদিকে মানুষ বস্তু বাড়িয়ে
তার আরামের পরিমাণ বাড়াতে থাকলো যার ফলে যদিও তার শান্তির পরিমাণ
দুশ্চিন্তা-বৃদ্ধির জন্য কমতে থাকলো তা হলেও ‘পরিবর্তিত’ সুখের পরিমাণ বাড়তে
থাকলো । আর তার ফলে মানুষ ক্রমে ক্রমে উন্নত হতে থাকলো । এই প্রক্রিয়া চলতে
থাকলো , আরাম বাড়তে থাকলো আর সুখের পরিমাণ বাড়ার হার কমতে থাকলো , তারপরে একসময়
সর্বোচ্চ সুখের পরিমাণের জন্য যে আরামের পরিমাণ দরকার তাও যখন মানুষ ছাড়িয়ে গেল
আরও বস্তু আরও বস্তু তার জীবনযাত্রায় যোগ করার জন্য , তখন বাড়তি আরাম শান্তিকে
দুশ্চিন্তা –বৃদ্ধির জন্য এতটাই কমিয়ে দিল যে পরিবর্তিত সুখের পরিমাণ আগের
সুখের পরিমাণ থেকে কমে গেল । ফলে মানুষের উন্নতির জায়গায় অবণতি হতে থাকলো ।
এখানে , আমাদের আরও একটা জিনিষ লক্ষ্য করতে হবে । দুশ্চিন্তা-বৃদ্ধির হার বা
অপরিবর্তিত সংখ্যা k – এর পরিমাণ সার্বজনিক বা সর্বকালীন সমান নয় । তা নির্ভর
করে সামাজিক , পারিপার্শিক , সাধারণ আর গড় জীবনযাত্রার মান এবং এইবিধ জিনিষের
উপর । কাল এবং কোন ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিগোষ্ঠির ক্ষমতার উপরেও তা নির্ভরশীল ।
জীবনযাত্রায় যে বস্তু যোগসাধনের জন্য কোন ব্যাক্তির বা গোষ্ঠির তুচ্ছ
দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হবে তা অন্য ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির প্রভূত পরিমাণে দুশ্চিন্তা
সৃষ্টি করতে পারে । তাই প্রথম ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির কাছে যে বস্তুর যোগ সুখের
পরিমাণ বাড়ায় সেই একই বস্তুর যোগ দ্বিতীয় ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির সুখের পরিমাণ বেশ
কমিয়ে দিতে পারে । তাই কোন বস্তু জীবনযাত্রায় যোগ করার আগে ভাল ভাবে দেখা উচিৎ
সামাজিক , আর্থিক , পারিপার্শিক এবং এই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের অবস্থা এবং
নিশ্চিৎ হয়ে নেওয়া উচিৎ যে এই বস্তুর যোগ এমন কিছু দুশ্চিন্তা সষ্টি করবে কিনা
যা সুখের পরিমাণকে কমিয়ে দেয় ।
আমরা বলি শহরের মানুষ গ্রামের মানুষের থেকে উন্নত , সভ্যসমাজের মানুষ
আদিবাসীদের থেকে উন্নত । আমরা কি সবসময় ঠিক ? কেননা সঠিক উন্নতি নির্ভর করবে না
জীবনযাত্রার মান বা আর্থিক , শিক্ষাগত , বা এই ধরনের মানের উপর , উন্নতি নির্ভর
করবে সুখের পরিমাণের উপর । যদি কোন গ্রামবাসী কোন শহরবাসীর থেকে সুখী হয় তবে
সেই গ্রামবাসী সেই শহরবাসীর থেকে উন্নত । সত্যি বলতে জীবনযাত্রা যত জটিল হয় সুখ
ততই কমে যায় আর পরিণামে উন্নতির জায়গায় হয় অবণতি । একজন খুব সরল জীবনযাত্রার
লোক যার শুধু সহজাত প্রয়োজন মিটাবার ক্ষমতা আছে এবং যে মূল্যবান এবং জটিল
আরামদায়ক বস্তুর মালিক হবার জন্য চেষ্টা বা আশা করে না , অন্য একজন ধনী
ব্যাক্তির ( যে দ্রুততম জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত এবং সবসময়েই আরাম বাড়াবার জন্য আরও
বেশী বস্তুর মালিক হবার জন্য চেষ্টা ও আশা করে যাচ্ছে ) তুলনায় অনেক গভীরভাবে ও
অনেক সুখে ঘুমতে পারবে । সুতরাং প্রথম ব্যাক্তি দ্বিতীয় ব্যাক্তির থেকে হবে
উন্নত । তাই গ্রামের লোক , অনগ্রসর মানুষ , আদিবাসী এদের শিক্ষা এবং আরামদায়ক
জিনিষ দিয়ে ভাল করার আগে আমাদের ভালভাবে বিচার করা উচিৎ তাদের ক্ষমতা এবং তাদের
বর্তমান ও পরিবর্তিত সুখের পরিমাণ ।
বর্তমান পৃথিবীতে আমরা দেখতে পাচ্ছি অতি উন্নত দেশের লোকেদের অনেকেই জীবনধারণের
সহজাত প্রবৃত্তি হারিয়ে ফেলেছে । আরামপ্রদ সমস্ত বস্তুই তাদের নাগালের মধ্যে ,
এইসব জিনিষ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করার সামাজিক ও আর্থিক ক্ষমতা তাদের যথেষ্ট
আছে কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের অনেকে হিপি হয়ে যাচ্ছে , নেশাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে ,
কেউ অসামাজিক ভাবে জীবনযাপন করছে , আবার কেউ সমাজ থেকে দূরে গিয়ে বাঁচার চেষ্টা
করছে । সত্যি বলতে এদের অনেকেই হৃদয়ের গভীর মূলে খুব অখুশী । তারা এখন আর
আরামের পরিমাণ বাড়িয়ে উন্নতির রাস্তায় না গিয়ে মানসিক শান্তি বাড়িয়ে উন্নতির
রাস্তায় থাকার চেষ্টা করছে । কিন্তু যেহেতু তারা বস্তুলব্ধ আরামে অভ্যস্ত হয়ে
গেছে তাই সমাজ়ে থেকে মানসিক শান্তি বাড়ান তাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর ( প্রায়
অসম্ভব ) হওয়ায় তারা অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে আর সমাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে ।
আমাদের আরও একটা কথা ভাবার আছে , আরামদায়ক কোন বস্তু আমাদের জীবনযাত্রায় এলে
আমরা অল্প সময়েই তার সাথে খাপ খাইয়ে নিই এবং তার ব্যবহারে আর তার থেকে প্রাপ্ত
আরামে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি । তাই যদি আমরা ঠিকও করি যে ওই আরাম আমাদের উন্নতির থেকে
অবণতিই করছে ( দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করার জন্য) এবং আমাদের জীবনযাত্রা থেকে ওই
আরামদায়ক বস্তুটি বাদ দেওয়া উচিৎ , তা হলে আমাদের কাছে তা হবে খুবই কষ্টকর এবং
প্রায় অসম্ভব । ধরা যাক , গাড়ী চড়ে চলাফেরা করার আরাম এবং তার থেকে সৃষ্ট সুখের
জন্য কোন এক ব্যাক্তি ধার করে বা তার কষ্টে-জমান শেষ বয়সে – কাজে লাগার পুঁজি
নিঃশেষ করে একটা পুরান গাড়ি কিনলো । প্রথম প্রথম তার বস্তুলব্ধ আরাম বাড়লো এবং
তার ফলে বাড়লো তার আপাতদৃষ্ট সুখ । কিন্তু কিছুদিন বাদেই যখন গাড়ীটা
রক্ষণাবেক্ষণ করার নানা সমস্যা – যেমন নিয়মিত servicing , সারাই , spare parts
পরিবর্তন , পরিস্কার – আর তার সঙ্গে তেলের দাম , গ্যারেজেরভাড়া , তেল এবং
যন্ত্রাংশ চুরি ইত্যাদি তার দুশ্চিন্তা গাড়ী সংক্রান্ত ব্যাপারে এতটাই বাড়িয়ে
দিল যে তার মানসিক শান্তি অনেক কমে যাওয়ায় তার সুখের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক
কমে গেল । তখন সে ঠিক করলো গাড়ী যখন তার সুখ কমিয়ে দিয়েছে তখন গাড়ীটাকে বেচে
দিয়ে অন্ততঃ আগের সুখের পরিমাণ বজায় রাখাই ভাল । কিন্তু তখন সে দেখতে পাবে তা
প্রায় তার কাছে অসম্ভব হয়ে গেছে , কেননা সে এবং তার পরিবারের অন্য সবাই সেই
সময়ের মধ্যে জনসাধারণের যাবার জন্য যে বাস/ট্রাম প্রভৃতি যানবাহন আছে তাতে যেতে
অনভ্যস্ত হয়ে পড়েছে । আর ভাড়া করা নিজস্ব গাড়ীতে চলাফেরা আরও খরচার ব্যাপার ।
তাই গাড়ীটা না রাখা ভাল এটা জানা সত্ত্বেও সমস্যা এবং তজ্জনিত দুশ্চিন্তা আরও
বেড়ে যাবে বলে গাড়ীটা ব্যবহার করেই যাবে । তাই তার সুখের পরিমাণ গাড়ী থাকার
আগের থেকে অনেক কমে যাবে । তার উন্নতি না হয়ে অবণতি হবে । সে এটা পরে জানা
সত্ত্বেও কিছুই প্রায় করতে পারবে না আরও দুশ্চিন্তা বাড়ার ও সুখ কমে যাবার কথা
চিন্তা করে ।
এর সাথে সাথে যদি আমরা চিন্তা করি আর এক ব্যাক্তির কথা যার গাড়ী নেই এবং যে তার
সামাজিক ও আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে গাড়ী কেনেনি । প্রথম ব্যাক্তির
তুলনায় তার জীবনযাত্রায় কোন পরিবর্তন হয় নি এবং সুখের পরিমাণও একই আছে যেখানে
প্রথম ব্যাক্তির জীবনধারায় পরিবর্তন হয়েছে আর সুখের পরিমাণ কমেছে ।
এর উপরে , আমরা যত বেশী বস্তুলব্ধ আরামে অভ্যস্ত হই ততই আমাদের নিজস্ব দৈহিক
ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি । ধরা যাক আমাদের দৃষ্টিশক্তি । ১০০/১৫০ বছর আগে আমাদের
প্রায় সবাই রাত্রিবেলা হ্যারিকেন / মোমবাতি / গ্যাসলাইট বা এই ধরণের আলোয়
পড়াশুনা করায় অভ্যস্ত ছিলাম । এমনকি আমাদের ছোটবেলাতেও কোন কারণে বিদ্যুৎ
বিপর্য্যয় হলে ( তখন লোড শেডিং ছিল না ) আমরা এই ধরণের আলোতেই পড়েছি । কিন্তু
আজকাল যখন লোড শেডিং নিত্যদিন অনেকটা সময় জুড়েই হচ্ছে আমরা এবং বিশেষ করে
আমাদের ছেলেমেয়েরা এই ধরণের আলোয় পড়তে পারছে না , কেউ তা চেষ্টা করেও করছে না
।যারা খুব বড়লোক বা যাদের সংস্থান আছে তারা জেনারেটর / ইনভার্টার / এমার্জেনসি
লাইট ইত্যাদি ব্যবহার করছে । আর বেশীর ভাগ লোকই এই সময়টা কোন প্রয়োজনীয় কাজ না
করে কাটিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে কেননা অল্প শক্তির আলোয় কাজ করার দৃষ্টিক্ষমতা
তাদের চোখের নেই । এর থেকে বোঝা গেল যে আমাদের চোখের ক্ষমতা , বেশী শক্তির আলো
ব্যবহার করার জন্য , কমে গিয়েছে । এখন , কোন কারণে যদি বিদ্যুৎ না থাকে বা আমরা
যদি ঠিক করি যে বৈদ্যুতিক আলো আমরা ব্যবহার করবো না তবে আমাদের অনেকগুলো
প্রজন্ম আবার কাটিয়ে দিতে হবে আগের মতো বৈদ্যুতিক আলো ছাড়া অন্য কম শক্তির আলোয়
লেখাপড়া করায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্য । এই সময়ের মধ্যে প্রথম কয়েক প্রজন্মের লোকেরা
বৈদ্যুতিক আলো ছাড়া লেখাপড়া করার চেষ্টায় এতটাই সমস্যা আর কষ্টে থাকবে যে বেশীর
ভাগ লোকের শিক্ষাই ব্যাহত হবে । তারপরের কয়েক প্রজন্মের লোকেরা এই কষ্ট কম ভোগ
করবে এবং তারা আরও একটু বেশী শিক্ষা লাভ করবে । বেশ কিছু প্রজন্ম বাদে লোকেরা
আবার বৈদ্যুতিক আলো ছাড়া লেখাপড়া করায় সক্ষম হবে যেমন তারা করতো বৈদ্যুতিক আলো
আবিস্কারের আগে ।
এইরকমভাবে , বহির্ভূত যান্ত্রিক শক্তির ব্যবহারে আমাদের দৈহিক ও মানসিক শক্তিও
কমে গেছে । আমরা যদিও দ্রুত ও সহজলভ্য যানবাহনের জন্য একজন আর একজনের –
দৈহিকভাবে – কাছাকাছি আসতে পারছি , নানান সমস্যার উদ্ভবে আমরা মানসিকভাবে একে
অন্যের থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি । যদিও আমরা গোষ্ঠিভুক্ত জীব ও মানসিক ভাবে
আমরা যত বেশী সংখ্যায় যত বেশী কাছাকাছি থাকতে পারবো ততই আমাদের সুখ , তবুও আজ
আমরা মনের দিক দিয়ে খুব একা । বেশীর ভাগ সময়েই আমরা আমাদের মনের কথা আলোচনা
করার জন্য সম-মনা লোক আমাদের কাছাকাছি খুঁজে পাই না ।
উপরের এই আলোচনা আমাদের এই ধারণা দেয় যে আরামবৃদ্ধির জন্য কোন বস্তু আমাদের
জীবনে যোগ করার আগে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে তা থেকে উদ্ভূত আরাম এবং সমস্যা
শেষপর্য্যন্ত আমাদের সুখের পরিমাণ সত্যিকারের কতটা বাড়াচ্ছে । এখানে আবার এটাও
জানা দরকার কোন বস্তুর যোগফলে উদ্ভূত সুখের পরিমাণ সবার জন্য সব সময়ে এক নয় ।
তা নির্ভর করে ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা এবং অতীত অবস্থার উপরে । ধরা যাক , একজন
খুব বড়লোকের জীবনযাত্রায় একটা গাড়ী যোগ হোল , তাতে তার সুখের পরিমাণ বাড়ার
সম্ভাবনাই বেশী । কিন্তু কোন একজন গরিব মানুষ যদি তার জীবনযাত্রায় একটা গাড়ীকে
যোগ করে তবে উদ্ভূত সমস্যায় তার সুখের পরিমাণ যথেষ্ট পরিমাণে কমে যাওয়ার কথা ।
এইসব আলোচনার উপরে নির্ভর ক’রে আমাদের কেউ কেউ ঠিক করেছে যে ‘সুখের পরিমাণ’
ক’মে যাওয়াকে বন্ধ করার জন্য বা সুখের পরিমাণ আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য
তারা কিছু কিছু অতিরিক্ত বস্তু তাদের জীবনযাত্রা থেকে বাদ দেবে বিশেষ করে সেইসব
বস্তু যা সমস্যা বা আশঙ্কা বেশী মাত্রায় সৃষ্টি করছে । তারফলে দেখা যাচ্ছে
তাদের সমস্যা ও কষ্ট আরও বেড়ে যাচ্ছে কেননা তারাতো ইতিমধ্যে সেই আরামপ্রদ
বস্তুতে বা বস্তুগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে । তাই ভালভাবে বোঝা সত্ত্বেও , যে
আমাদের জীবনযাত্রা থেকে আরামপ্রদ জিনিষ কমান উচিৎ ও কোন্ কোন্ জিনিষ আমাদের
সমস্যা ও আশঙ্কা বেশী মাত্রায় বাড়াচ্ছে যার ফলে সুখের পরিমাণ বাড়ার জায়গায় কমে
যাচ্ছে , সেইসব বস্তু আমাদের জীবনযাত্রায় ব্যবহার করেই যেতে হবে কেননা তা
নাহ’লে সেই বস্তুর অভাবজনিত সমস্যা সুখের পরিমাণ আরও কমিয়ে দেবে ।
এইসব আলোচনা থেকে এবং আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে আমাদের বোঝা উচিৎ যে আমরা এখন
এমন একটা অবস্থায় পৌঁছেছি যেখানে আমাদের জীবনযাত্রায় কোন অকিঞ্চিৎকর ছোট
আরামদায়ক বস্তুর সংযোজন আমাদের ‘সুখের পরিমাণ’ বেশ কমিয়ে দিচ্ছে কেননা সেই
ক্ষুদ্রবস্তুই বেশ ভাল রকম সমস্যা ও আশঙ্কা সৃষ্টি করছে । আর এটাও আমাদের জানা
উচিৎ যে বস্তুলব্ধ আরামবৃদ্ধির রাস্তাটা একতরফা । আমরা যদি বুঝিও যে আমাদের
বস্তুলব্ধ আরাম এমন এক পর্য্যায়ে আমাদের নিয়ে গিয়েছে যেখানে উদ্ভূত সমস্যা ও
আশঙ্কা আমাদের ‘সুখের পরিমাণ ‘ আগের তুলনায় কমিয়ে দিচ্ছে এবং যদি ঠিকও করি যে
কিছু বস্তু আমাদের জীবনযাত্রা থেকে বাদ দেব যার জন্য সমস্যা কমবে ও সুখের
পরিমাণ বেড়ে যাবে তবুও আমরা সেই উলটো রাস্তায় চলতে পারব না কেননা সেই আরামে
আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাবার জন্যে সেই বস্তুর অভাব যে সমস্যা সৃষ্টি করবে তা
বস্তুটা থাকা অবস্থায় যে সমস্যা ছিল তার থেকে বেশী , তাই সুখের পরিমাণ বাড়ার
বদলে কমে যাবে । অবশ্য বেশ কয়েক প্রজন্ম বাদে যখন নতুন প্রজন্মের লোক আর সেই
বস্তুটির বদভ্যাস অনুভব করবে না তখনই সুখের পরিমাণ বাড়তে থাকবে ।
এমতাবস্থায় আমাদের উচিৎ যে যেখানে আছি – সেখানেই থাকা মানে যে যে আরামদায়ক
জিনিষে অভ্যস্ত তাতেই সন্তুষ্ট থাকা আর নতুন কোন আরামদায়ক বস্তু জীবনযাত্রায়
যোগ না করা ।যখন আমরা আরামদায়ক বস্তু সংযোজনের ইঁদূরদৌড়ে আর ব্যাস্ত থাকবো না
তখনই আমরা আধ্যাত্মিক উন্নতির কথা ভাববার সময় পাব যা আমাদের মানসিক শান্তি
বাড়াবে যার ফলে আমাদের সুখের পরিমাণ বাড়তে থাকবে । যাই হোক , এর মানে এই নয় যে
কেউ কখনও তার আরাম বাড়াবার জন্য কোন বস্তু তার জীবনে যোগ করবে না । নিশ্চয় করবে
তবে অবস্থা বিবেচনা করে । কোন এক ব্যাক্তির কোন এক প্রকৃত অবস্থা বিবেচনা করে ,
তার আরাম কতটা বাড়বে , সমস্যা কতটা বাড়বে , তার বর্তমান আরাম ও সমস্যা কতটা ,
সুখের পরিমাণ এখন কত ও বাড়ার সম্ভাবনাই প্রবল কিনা এইসব নানা কথা নানা দিক থেকে
চিন্তা করে এবং সবসময় মনে রেখে সুখের পরিমাণ বাড়াটাই প্রথম কথা , তবেই সেই
বস্তু জীবনযাত্রায় সংযোজন করা যেতে পারে । এক ব্যাক্তির কখনই কোন বস্তু পাবার
জন্য লালায়িত হওয়া উচিৎ নয় যেহেতু সে বস্তু অন্য লোকেদের আছে বা অন্যদের আরাম
দিচ্ছে । তার ভেবে দেখা দরকার সে বস্তু তার কেনার ও রক্ষণাবেক্ষণ করার সামর্থ্য
আছে কিনা ও যাদের আছে তাদের সেই বস্তু কিরকম সমস্যা ও জটিলতার সৃষ্টি করছে যার
থেকে সে বুঝতে পারবে সেই বস্তুর সংযোজন তার সুখের পরিমাণ আগের তুলনায় কতটা
বাড়াবে । যখন সে পুরোপুরি নিশ্চিৎ হবে যে পরিবর্তিত সুখের পরিমাণ আগের তুলনায়
বাড়বে তখনই তার সেই আরামদায়ক বস্তু তার জীবনযাত্রায় যোগ করা উচিৎ ।
***********
বাংলা ভাষা ও বানান
হাফিজ আহমেদ
অনেকেই মনে করেন, যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত বানানবিধি অনুসরণ না করা এক প্রকার ধৃষ্টতা। তিরিশের দশকের বাঙালিদের ধারণা তাই ছিল। কারণ তখন আসাম ও বাংলার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও ভাষা নিয়ন্ত্রিত হত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে। সেই অবস্থা এখন আর নাই। সেই ধারণাও আর নাই। সেইখানেও ভাষার উপর কলকাতার প্রভাব দিনদিনই হালকা হয়ে আসছে। দেশ বিভক্তির পর হিন্দি রাষ্ট্রভাষা হবার পর সেখানকার বাঙালিদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির পরিধি সংকুচিত না হলেও প্রসারিত হয় নাই। দূরদর্শন-এ নাটকাভিনয়ে, সংবাদ পাঠে ও বিজ্ঞাপন প্রচারে এই বাস্তবতার প্রমাণ পাওয়া যায়। উচ্চারণ আর আগের মত মধুর নয়। সাজসজ্জা উচ্চমানের নয় আর বানান ভুল আছেই। সুতরাং সত্তর বৎসর আগে প্রচলিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ভাষারীতি ও বানাননীতি এই দেশে অনুসৃত হবার কথা বার বার সুপারিশ করা হলেও আমরা তেমন অনুপ্রাণিত হতে পারছি না। আমরা আমাদের স্বদেশের লেখক ও সম্পাদকদের লেখা হতে জ্ঞাতসারে নিত্যই অনুপ্রাণিত হচ্ছি। আমরা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছি। ফলে আবির্ভাব হয়েছে এক নতুন জাতির। রক্তাক্ত সংগ্রাম ও জাতীয় সত্তার নূতন উপলব্ধি দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে ভাষা, বানান ও গোটা সাহিত্যের উপর। তাই আমাদের লেখকদের সৃষ্ট সাহিত্যে দেশের কথা আছে, আছে আধুনিক জীবনযাত্রার কথা। আর আছে সংগ্রামের কথা, আছে গ্রামের কথা। তাই হুমায়ুন আহমেদ-এর নাটক সীমা ছাড়িয়ে ঐপারের বাঙালিদের চিত্তকে আকর্ষণ করে। অনুমান করতে পারি যে, তারা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। আধুনিক বাংলাভাষা এখন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ঢাকা হতে। গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে, সাহিত্যে সমৃদ্ধ আমাদের মাতৃভাষা ক্রমপরিবর্জন ও ক্রমপরিবর্ধনের পথ ধরে দিন দিনই সম্মুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এইসব ভেবে আমরা যদি নিজেদের সাহিত্যের জন্য নিজেরা গর্বিত হই, তা কোনমতেই দোষের হতে পারে না। সেই সময় বর্ণমালায় ‘৯’ (লি) বর্ণ ছিল। আজ আর তা নাই। বর্গীয় ‘ব’ ও অন্তস্থ ‘ব’- এর আকৃতি ও উচ্চারণে কোন পার্থক্য নাই বলে, শিশুদের বর্ণ বইতে এখন একটি ‘ব’ই মুদ্রিত হচ্ছে। তখনকার অনেক রীতিই আজকাল ধীরে ধীরে অচল হতে চলেছে। ভাষার গতি সময়ের গতিকে দ্রুত অতিক্রম করে যে নীতিগত পরিবর্তন এনেছে তা আমাদের চেতনাকে শাণিত করছে। বুঝতে পারছি যে, এই পরিবর্জন ও পরিবর্ধনের গতিতে আর যতি আসবে না, চলতে থাকবে।
আজকে ভাষার আরও সংস্কার প্রয়োজন, বিজ্ঞানসম্মত বানান ব্যাকরণভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের একটা অভ্যাস আছে যে, একটি শব্দ লেখা শেষ হলেই একটি ী-কার কলমের টানেই শব্দশেষে লাগিয়ে দেয়া। চেতনার তাড়নায় মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে, সকল শব্দ শেষে ী-কার দেওয়া একটি ভুল অভ্যাস। সেইজন্য শব্দশেষে অপ্রয়োজনীয় ও ব্যাকরণসম্মত নয়, এমন ী-কারকে বিদায় দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাবাসি ও বাংলাভাষি যারাই মনযোগ দিয়ে সাহিত্যচর্চা করেন, তাদের প্রায় সকলেই এই পরিবর্ধিত বানানরীতি অনুসরণ করে আসছেন। এই ব্যাপারে পুস্তক প্রণেতাদের হতে পত্র-পত্রিকার সম্পাদকগণই অগ্রণি ভূমিকা রেখে আসছেন। তারাই আজ অগ্রসর। আজ প্রায় লেখকই সাগ্রহে সানন্দে শব্দশেষে ি -কার ব্যবহার করছেন। তাদের আগ্রহ আমাদেরকে আকৃষ্ট করছে।
একসময় আমরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ তুলে ধরতাম। আর আজ বাংলাদেশের আধুনিক লেখকদের লেখা তুলে ধরবার মত দৃষ্টান্তের অভাব নাই। কলকাতায় বলা হয়, আকাদেমি। আর আমরা বলি ‘অ্যাকাডেমি’। আমাদেরটাই ব্যাকরণ সম্মত। কারণ আমরা শব্দের মূল উচ্চারণের বিকৃতি হতে দেই নাই। ভাষার উৎকর্ষ সাধনে এখন আমরা কলকাতা হতে অগ্রগামি। এর কারণ বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করবার আন্দোলনে, অমর একুশেতে বাঙালি যুবকদের অকাতরে প্রাণদান আর ভাষা ও স্বাধীনতার মূল্য পরিশোধে শেখ মুজিবের অকালে আত্মদান।
পশ্চিম বংগে বাংলাভাষা বাঙালিদের মাতৃভাষা এবং ভারতে তা প্রাদেশিক ভাষা। এইখানে বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং এই ভাষা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। পশ্চিম বংগে বানানে শব্দের রূপান্তর ঘটেছে ধীরে ধীরে। বাংলাদেশে শব্দের শ্রী এসেছে দ্রুত গতিতে। আধুনিক সাহিত্যে এসেছে আধুনিক বানান। অর্থাৎ শব্দের স্বর ও সুর ক্রমশ সরল হয়ে এসেছে। তা আসতে থাকবে আগামি দিনেও। ‘শ্রেণী’ ও ‘কর্মসূচী’-তে আধুনিকতার স্রোতে আজকাল ি - কার এসেছে। এতে আমরা খুশি। তবে শত লেখালেখিতেও পুলিস বানানে কেউই ‘স’ ব্যবহার করছেন না। সেই দুঃখে আমরা মুহ্যমান। আমাদের বিশ্বাস, ‘পুলিস’ বানানটি অদূর ভবিষ্যতে সকলেই ‘স’ দিয়া লিখতে উৎসাহিত হবেন। কারণ বানানটি অভিধানে আছে এবং তা অবশ্যই ব্যাকরণের বিধান মত।
দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত আমাদের প্রথিতযশা লেখকদের নিবন্ধে আধুনিক বানানের প্রতি আমরা গভীর মনযোগের সাথে দৃষ্টি দেই। কোথায় কোথায় ী-কারের পরিবর্তে ি-কারের আর্বিভাব ঘটেছে তা লক্ষ্য করি। সেই দেখার খানিকটা এইখানে তুলে ধরতে চাই।
১। স্ত্রীবাচক শব্দের অন্তে ী-কার হয়। এইসব শব্দে লিঙ্গ পার্থক্য বুঝবার কারণেই শব্দশেষে ী-কার দিতে হয়। মনে এরূপ ভাবনা আসে যে, হয়তবা পঁচিশ বৎসর পর স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে এই ী-কার নাও থাকতে পারে। ‘নদি’ ি-কার দিয়ে লিখলে, যদি শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গই বুঝায় তা হলে এই ী-কারের ব্যবহার এইখানে নাও থাকতে পারে। কিছু কিছু শব্দ আজকাল ি-কার দিয়ে লেখা হয়। শব্দগুলি যে স্ত্রীলিঙ্গ তা বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না। যেমন গিন্নি, বৌদি, দিদি, বিবি, রানি, দাদি, নানি, মামি, মাসি, পিসি, মুরগি ইত্যাদি।
২। জাতি বাচক শব্দের অন্তে আজকাল কেবলই ি-কার ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকা হতে প্রকাশিত অগ্রসর দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলিতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন পাকিস্তানি, জাপানি, মাদ্রাজি, সৌদি, কুয়েতি, বিহারি, বাঙালি ইত্যাদি।
৩। ব্যক্তিবাচক অনেক শব্দের অন্তে ি-কার ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন বন্দি, বাদি, কেরানি, আসামি, ফেরারি, সিপাই, কৌসুলি ইত্যাদি।
৪। সংস্কৃত বা প্রাকৃত হতে আসে নাই এমন সকল বংশগত শব্দের অন্তে আজকাল ি-কার ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন কাজি, গাজি, ফরাজি, নিয়াজি, জিলানি, কোরেশি, রিজভি, আলভি, গিরি, রেড্ডি, চৌধুরি ইত্যাদি।
৫। সংস্কৃত বা প্রাকৃত হতে আসে নাই এমন সকল নামবাচক শব্দের সকল জায়গায় কেবল ি- কার ব্যবহৃত হয়। যেমন চার্চিল, ক্লিনটন, কেনিডি, ইয়েলতসিন, রহিম, রশিদ, শহিদ, শফিক, মুসলিম, কামালউদ্দিন ইত্যাদি। তবে অর্ধ শতাব্দি পূর্বে রাখা নামগুলিতে ী-কার ও ূ-কার ছিল। তা আজও আছে। যেমন কাজী, সাহাবউদ্দীন, নূরউদ্দীন, আয়ূব, হুমায়ূন, ওয়াদূদ ইত্যাদি। এইসব নামে ি- কার ও ু-কার থাকলে ভাল হত।
৬। অর্জিত খেতাবেও ি-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন ক্বারি, কবি, মৌলভি, হাজি, বয়াতি ইত্যাদি।
৭। সংস্কৃত বা প্রাকৃত হতে এসেছে এমন সকল নামের অন্তে ী-কার ব্যবহৃত হতে দেখা গিয়েছে। তা অর্ধশত বৎসর আগের কথা। আজকাল অনেকেই ঐ সকল শব্দে ি-কার ব্যবহার করছেন। যেমন চক্রবর্তি, পূজারি, সন্ন্যাসি ইত্যাদি। আরও লক্ষ্য করা যায় যে, কতিপয় উচ্চবর্ণ হিন্দু নামের অন্তে ি-কার ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন চ্যাটার্জি,ব্যানার্জি, গাংগুলি, ব্রহ্মচারি ইত্যাদি।
৮। ভাষাবাচক শব্দের অন্তে নির্দ্বিধায় ি-কার ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন ইংরেজি, ফরাসি, আরবি, হিন্দি, মারাঠি, সিংহলি, পালি, নেপালি ইত্যাদি।
৯। প্রাণিবাচক কতিপয় শব্দের অন্তে ি-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন পাখি, হাতি ইত্যাদি।
১০। বস্তুবাচক শব্দের অন্তে ি-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন বাড়ি, গাড়ি, শাড়ি, কড়ি, ঢেঁকি, কাঁচি ইত্যাদি।
১১। স্থানবাচক সকল শব্দের অন্তে আজকাল সানন্দে ি-কার ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন করাচি, কান্ডি, রাওয়ালপিন্ডি, দিল্লি, চিলি, মালি, নাগাসাকি, পিকিং, হেলসিংকি ইত্যাদি। আমাদের দেশেও এইসব শব্দের অন্তে সাগ্রহে ি-কার ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন মহাখালি, নোয়াখালি, ধানমন্ডি, ফেনি, রাজবাড়ি, ঝালকাঠি, নলসিটি ইত্যাদি। এটা শুভ লক্ষণ। স্থানবাচক শব্দের শুধু অন্তে নয়, আদিতে ও মধ্যে সর্বত্রই ি-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন সান্তিয়াগো, হো চিমিন সিটি, চিন, ব্রিস্টল, মতিঝিল, গচিহাটা ইত্যাদি। এইসব স্থানে ি-কার ব্যবহার করলে ধ্বনি কোমল থাকবে, শুনতে ভাল লাগবে, দেখতে সুন্দর ও লিখতে সহজ হবে।
১২। বিশেষণবাচক শব্দের অন্তে আজকাল ী-কার ব্যবহার ব্যাপক হারে কমে গেছে। ি-কার ব্যবহারের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। আধুনিক লেখকদের নিবন্ধে, প্রায় সকল সংবাদপত্রের সংবাদের শিরোনামের দিকে লক্ষ্য করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। যেমন দেশি, বিদেশি, বেশি, খুশি, সরকারি, কারিগরি, কর্মচারি, বহুমুখি ইত্যাদি। তবে ব্যাংকগুলির নামের অন্তে পূর্ব হতেই সরকারিভাবে ী-কার আছে বলেই ‘সোনালী’, ‘রূপালী’, শব্দগুলিতে ি- কার ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সোনালি, রূপালি, ও পূবালি লিখতে পারলে সুন্দর হত।
১৩। কতিপয় বাংলা শব্দের অন্তে ী-কার হয়। আবার ঐ সকল শব্দ পরিবর্তিত অবস্থানে ী-কার বর্জন করে ি-কার অর্জন করে। যেমন প্রতিযোগী, সহযোগী, স্থায়ী, প্রাণী, মন্ত্রী ইত্যাদি শব্দগুলি ী-কার হারিয়ে হয় প্রতিযোগিতা, সহযোগিতা, স্থায়িত্ব, প্রাণিবিদ্যা বা প্রাণিবাচক, মন্ত্রিসভা। মূল শব্দে ী-কারের পরিবর্তে ি-কার আনা যায় কিনা তা এখনই ভেবে দেখা দরকার। ‘জাতি’ কি করে ‘জাতীয়’ হয় তার ব্যাখ্যা কোথাও পাই না।
১৪। শব্দটি কিন্তু ‘কম্পানি’। আমরা লিখি ‘কোম্পানী’। আর একটি শব্দ ‘ফটোগ্রাফী’। এটিও ভুল, হবে ‘ফটোগ্রাফি’। ‘ফোন’ যেইভাবে উচ্চারিত হয় সেইভাবে। একটি মজার নিয়ম আছে যা সকলেই অনুসরণ করেন। কিন্তু এটাই যে নিয়ম তা হয়ত অনেকেই জানেন না।
বাংলায় ব্যবহৃত সকল বিদেশি শব্দের আদিতে, মধ্যে ও অন্তে কখনও ী-কার হয় না। বিদেশি হলেই শব্দটিতে কেবল ি-কার হবে। ছাত্র ছাত্রীদের এই নিয়মটি সহজ বলে সহজেই মনে থাকবে। যেমন মিলিটারি, আর্টিলারি, ইস্টার্ন, স্ট্রিট, লিমিটেড, কম্পানি, জিওগ্রাফি, ফোটোগ্রাফি, প্যাথলজি (শব্দশেষে যত-জি আছে)। ডিকশনারি , জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, প্রাইমারি, লাইব্রেরি, ব্যাটারি, নোটারি, নার্সারি, গ্যালারি, জুয়েলারি, কনফেকশনারি, সার্জারি, লটারি, ল্যাবরেটরি (শব্দের শেষে যত রি আছে)। এজেনসি, ফার্মাসি, কোতোয়ালি, অ্যাভিনিউ, অ্যাকাডেমি ইত্যাদি।
১৫। ইংরেজী অনেক শব্দের বাংলায় ‘অ্যা’ হয়। যেমন অ্যাসিড, অ্যাপোলো, অ্যাপেক্স, অ্যারোম্যাটিক, অ্যান্ড, অ্যানজেলিক, অ্যানাটমি, অ্যাস্ট্রলজি, অ্যাডভোকেট, অ্যাকাউন্টস, অ্যাকাডেমি, অ্যাভিনিউ ইত্যাদি।
১৬। বাংলায় বিদেশি শব্দ লিখতে ৃ-কার কখনও ব্যবহৃত হবে না। যেমন ব্রিষ্টল, ব্রিসবেন, ব্রিটিশ, ব্রিটেন, খ্রিস্টাব্দ, ফ্রি, প্রিটোরিয়া, গ্রিনল্যান্ড ইত্যাদি।
১৭। ইংরেজি ‘S’ বা ‘SS’ র স্থলে বাংলায় কেবলই ‘স’ হয়। যেমন স্টেশন, মাস্টার, স্টোর, স্টোন, ক্লাস, গ্লাস ইত্যাদি। দুইটি শব্দ ব্যতিক্রম আছে। শুগার ও ইশ্যু লিখতে ‘শ’ হবে।
১৮। যে সকল ইংরেজি শব্দের শেষে ‘CE’ আছে সেই সকল শব্দ শেষে বাংলায় অবশ্যই ‘স’ হবে । এটি ব্যাকরণের বিধান। যেমন পুলিস, নোটিস, অফিস, জাষ্টিস ইত্যাদি ।
১৯। বিদেশী শব্দ লিখতে ‘ষ’ ও ‘ণ’ বর্ণ দুইটি ব্যবহার করা যায় না। যেমন পোষ্ট হবে পোস্ট, ইষ্টার্ণ হবে ইস্টার্ন, হর্ণ হবে হর্ন, মডার্ণ হবে মডার্ন, কর্ণার হবে কর্নার, কর্ণেল হবে কর্নেল ইত্যাদি।
২০। ইংরেজি ST-র স্থলে বাংলায় কেবলই ‘স্ট’ হয়। যেমন স্টাফ, স্টার, অগাস্ট, স্টুডিও ফোটোস্ট্যাট ইত্যাদি।
২১। শহরের প্রায় সাইনবোর্ডগুলিতে ভুল বানানে অনেক শব্দ দেখতে পাওয়া যায়। শব্দগুলির শুদ্ধ বানান হবে স্টুডিও, স্টোর, স্টেশন, হর্ন, কর্নার, কর্নেল, অগাস্ট, ফোটোস্ট্যাট, অ্যাডভোকেট, অ্যাভিনিউ, অ্যাকাডেমি, কোতোয়ালি, পুলিস ইত্যাদি। শুদ্ধ বানানে এই সকল শব্দ লিখলে ভাষার প্রতি আমাদের ভালবাসাই প্রকাশ পাবে।
বাংলা ভাষাকে আরবি এবং পরে ইংরেজী বর্ণমালায় লিখবার এমনকি মাতৃভাষার উপর গুলি চালাবার নির্মম আদেশ এসেছিল বর্ধমান হাউজ হতে। পশ্চিমা শাসকবর্গের সেই চেষ্টা সফল হয় নাই। পরবর্তিতে বাঙালি সংস্কৃতির ও ভাষার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যেই জন্ম হয়েছিল 'বাংলা একাডেমী'র। সেই বর্ধমান হাউজই হচ্ছে আজকের বাংলা অ্যাকাডেমির সকল কর্মকান্ডের পাদপীঠ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, তাদের প্রকাশিত অভিধানগুলিতে অনেক বানান ভুল দেখতে পাওয়া যায়। সময়ের সাথে মিল রেখে ভাষাকে বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যাকরণ-নির্ভরশীল করে তুলবার কোন পদক্ষেপ এখনও নেয়া হয় নাই। আমাদের বিরাট ভলিউমের ব্যাকরণ বই ও অভিধানগুলি বহু বৎসর পর পর কেবল পুনর্মুদ্রিত হয়, কখনও সম্পাদিত হয় না। রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘আমাদের স্কুল-কলেজগুলোতে ট্রাম চলে, মন চলে না’। সেই কথাগুলি এখন আমাদের বেলায় খাটছে। আমরা সুন্দর টাই পরে, বঙ্গবন্ধুর দেওয়া উদীয়মান রক্তিম সূর্যখচিত সবুজ পতাকা লাগিয়ে ‘বাংলা একাডেমী’-তে অনুপ্রবেশ করি, বাংলা অ্যাকাডেমিতে প্রবেশ করতে আমাদের মন চায় না। দুই তিন বৎসর পরপর বাংলা অ্যাকাডেমির প্রশাসনে পরিবর্তন আসে। এইবারও এসেছে। ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, স্বদেশের বিশিষ্ট লেখক এবং পত্রিকা সম্পাদকের সাথে পরামর্শ করে বাংলাভাষা উন্নয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। বাংলা অ্যাকাডেমির বর্তমান কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে জাতি একটি যুক্তিসংগত বাংলা ব্যাকরণ এবং একটি ব্যাকরণসম্মত আধুনিক অভিধান উপহার পেতে পারে। তখন এই কথা কেউ বলতে পারবে না যে, ভাষার প্রতি আমাদের আদর নাই। ভাষার প্রতি ভালবাসা দেখালে কে না খুশি হবে?
***
ভুল বানান
হাফিজ আহমেদ
পাঠ্য পুস্তুকে ও স্বনামধন্য লেখকদের বইতে অসংখ্য ভুল বানান দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো অনেকদিন পরপর পুনর্মুদ্রিত হয়। কিন্তু সম্পাদিত হয় না। সেখানে আমাদের মতো নগণ্য পাঠকদের মতামত প্রকাশের সুযোগ খুবই সীমিত। অপরদিকে অগ্রসর দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোতে প্রতিদিন ও প্রতিসপ্তাহেই আধুনিক ও ব্যাকরণ সম্মত বানান অনুসরণ করে সম্পাদিত হয় বলে, ভুল বানান খুব কম দেখা যায়। এখানে আমাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ ব্যাপক। আমরা যা লিখি প্রকাশকগণ তাদের পত্রিকায় তা প্রকাশ করেন। আমরা তখন বাধিত হই। আর সেজন্য প্রকাশকদের সাধুবাদ জানাই। স্বাধীনতার পর থেকেই এসব বিষয়ে আমরা লিখে আসছি। ফলে ভুল বানান ধীরে ধীরে কমে আসছে। এখনও যেসব শব্দ ভুল বানানে প্রতিদিন পত্রিকায় মুদ্রিত হয় তা দেখে ব্যথিত হই। সেসব শব্দের প্রতি সম্পাদকদের দৃষ্টি চাই। অফিস, প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও বিজ্ঞাপনে শুদ্ধ বানান আসবে, তাও আমরা চাই। সবাইকে সবিনয়ে জানাতে চাই যে, ভুল বানান নির্মূল করার লক্ষ্যে আমরা যে সরব ও কলম অভিযান চালাচ্ছি, তা চলতে থাকবে। বর্তমানে যেসব শব্দ ভুল বানানে মুদ্রিত দেখি সেসব নিয়েই এখন আলোচনা করবো।
১।‘যদু’ লিখতে য ব্যবহার করা হয় ঠিকই। কিন্তু ‘জাদুকর’ বা ‘জাদুঘর’ লিখতে ‘য’ ব্যবহার করা যায় না।
২।‘ঘোষণা’ লিখতে ‘ষ’ ব্যবহার করা হয় ঠিকই। কিন্তু ‘ঘুস’, লিখতে ‘ষ’ ব্যবহার করা যায় না।
৩।‘পোষণ’ লিখতে ‘ষ’ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু ‘পোশাক’ লিখতে ‘শ’ এবং ‘আপস’ লিখতে ‘স’ ব্যবহার করতে হবে।
৪।‘বসন’, ‘আসন্ন’ লিখতে ‘স’ ও ‘ন’ ব্যবহার করা হয় ঠিকই। কিন্তু ‘ভাষণ’, ভীষণ’, ভূষণ’, ‘দূষণ’, ‘শোষণ’, ‘পোষণ’, বিষন্ন’ ‘পাষাণ’ ‘ঘোষণা’ ও ‘প্রশিক্ষণ’ লিখতে ‘ষ’ ও ‘ণ’ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, ‘ষ’ এর পর অবশ্যই ‘ণ’ হবে।
৫।‘মুহূর্ত’, মুমূর্ষু’, শুশ্রূষা’ লিখতে অনেকেই প্রথম বর্ণেই ূ - কার দিয়ে ফেলেন। তা ঠিক নয়। প্রথম বর্ণে ু- কার, দ্বিতীয় বর্ণে ূ-কার আসবে।
৬।‘ভূগোল’ ও ‘দূরান্ত’ লিখতে ূ-কার হবে। কিন্তু ‘ভুবন’ও ‘দুরন্ত’ লিখতে ু-কার হবে।
৭। অনেকেই ‘উচিত’ ও ‘খদ্যোত’ লিখতে ‘ৎ’ ব্যবহার করে থাকেন। শব্দ দুটোতে ‘ত’ ব্যবহার করতে হবে।
৮।দেখা যায় বিদেশি শব্দ লিখতে কখনও কখনও ‘ৎ’ ব্যবহার করেন। তা ঠিক নয়। শব্দ গুলোর বানান হবে, ‘সোভিয়েত’, ইয়েলতসিন’, ‘সানইয়েত সেন’, ভিয়েতনাম’, ‘নাতসি’, ‘ব্লিতসক্রিগ’, ‘ইবাদত’, ‘হেমায়েত’, ‘সাহাদাত’, ‘হায়াত’, লুতফর’, ইত্যাদি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোন বিদেশি শব্দ লিখতে ‘ৎ’ ব্যবহার করা যায় না।
৯। কোন কোন সম্পাদকীয়তে দেখেছি ‘মেডিকেল’। তা ঠিক নয়। শুদ্ধ বানান হবে ‘মেডিক্যাল’। যেমন ‘সার্জিক্যাল’, ‘অপটিক্যাল’, ‘কেমিক্যাল’, ‘ফার্মাসিউটিক্যাল’, ‘অ্যাকাডেমিক্যাল’, ‘ক্যালসিয়াম’ ইত্যাদি।
১০। অনেকেই ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ ও ‘গীতাঞ্জলি’ লিখতে ী-কার দিয়ে বসেন। এটি অনেকেরই ভুল অভ্যাস। অর্থ্যাৎ কলমের টানে শব্দ শেষ হলেই একটা ী-কার দিয়ে ফেলেন। আমাদের মনে রাখা দরকার যে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যতীত প্রায় সকল শব্দ শেষে আজকাল ী-কার এর পরিবর্তে -িকার ব্যবহার করা হচ্ছে।
১১। কোন কোন পত্রিকায় ‘নোটিস’ ‘শ’ দিয়ে মুদ্রিত হয়। তা ঠিক নয়। যেসব ইংরেজী শব্দের শেষে CE আছে সেসব CE-র স্থলে বাংলায় অবশ্যই ‘স’ হবে। যেমন ‘পুলিস’, ‘অফিস’, ‘ডিফেন্স’, ‘কমার্স’, ‘প্র্যাকটিস’ ইত্যাদি। এ নিয়মের কোন ব্যতিক্রম নেই।
১২। বাংলা শব্দেই কেবল ৃ-কার ব্যবহৃত হয়। বিদেশি শব্দে নয়। যেমন ‘পৃথিবী’, ‘বৃত্ত’, ‘নৃত্য’ ইত্যাদি। কিন্তু কোনো বিদেশি শব্দে যেমন ‘ব্রিটেন’, ‘ব্রিটিশ’, ‘ফ্রিজ’, ‘ব্রিজ’, ‘ব্রিগেডিয়ার’, ‘ব্রিস্টল’, ‘খ্রিস্টাব্দ’ লিখতে কখনও ৃ-কার ব্যবহার করা যায় না।
১৩। ‘রেফ’, উপরে থাকলে বর্ণ কখনও দ্বিত হয় না। যেমন ‘আচার্য’, ‘কার্যালয়’, ‘ধৈর্য্’, ‘আয়ুবের্দ’, ‘আশীর্বাদ’, ফার্মাসি’, চক্রবর্তি’, ‘বর্ষপূর্তি’ ইত্যাদি।
১৪। উপরে ‘রেফ’ থাকলে নিচে অবশ্যই ‘ণ’ হবে। যেমন ‘স্বর্ণ’, ‘কর্ণ’, ‘বর্ণ’, ‘পূর্ণিমা’ ইত্যাদি। এই নিয়মে অনেকে ‘ঝর্ণা’ লিখে থাকেন। তা ঠিক নয়। ‘ঝরনা’ লিখতে রেফ লাগে না। তাই ‘ণ’ আসতে পারে না। এটি মনে রাখার মতো একটি চমৎকার ব্যতিক্রম।
১৫। অনেকেই ‘হর্ন’, জার্নাল, কর্নার, মর্ডান, কর্নেল, লিখতে ‘ণ’ ব্যবহার করে থাকেন। তা ঠিক নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে কোনো বিদেশি শব্দ লিখতে কখনই ‘ণ’ ব্যবহার করা যায় না।
১৬। অনেকেই ‘স্লোগান’, ‘ক্লাস’, ‘পাস’ লিখতে ‘শ’ ব্যবহার করে থাকেন। তা ঠিক নয়। ইংরেজী 'S' এবং ‘SS’ এর স্থলে বাংলায় অবশ্যই ‘স’ হবে। তবে ‘শুগার’, ও ‘ইশ্যু’ লিখতে ‘শ’ ব্যবহৃত হয়। এ দুটি ব্যতিক্রম মাত্র।
১৭। ইংরেজী ‘ST’ র স্থলে বাংলায় সর্বদাই ‘স্ট’ হবে। যেমন ‘অগাস্ট’, ‘স্টার’, স্টোর’, ‘স্টিকার’, ‘ইস্টার্ন’, ‘স্টুডিও’, ‘ডেনটিস্ট’, ‘খ্রিস্টাব্দ’, ‘ফোটোস্ট্যাট’, ‘ইনডাস্ট্রিজ’ ইত্যাদি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোনো বিদেশি শব্দ লিখতে কখনও ‘ষ’ বা ‘ষ্ট’ ব্যবহার করা যায় না। ওসব ক্ষেত্রে সর্বদাই ‘স’ বা ‘স্ট’ ব্যবহার করতে হবে।
১৮।‘অন্বেষা’ ও ‘স্বদেশ’ ইংরেজিতে লিখতে অনেকেই Annesha ও Shadesh লিখে থাকেন। শব্দ দুটির শুদ্ধ বানান হবে Anwesha ও Swadesh.
১৯। ‘West End School’ বাংলায় ‘ওয়েস্ট এনড স্কুল’ হবে। ‘End’ -এর জন্য ‘এনড’, ঠিকই আছে। কিন্তু ‘And’ এর জন্য ‘অ্যানড’ হবে।
২০। ইংরেজি A-র জন্য বাংলায় অনেক ক্ষেত্রেই ‘অ্যা’ হয়। যেমন ‘অ্যানড’, ‘অ্যাসিড’, ‘অ্যালকোহল’, ‘অ্যাপেক্স’, ‘অ্যানজেল’, ‘অ্যাডভোকেট’, ‘অ্যাভিনিউ’, ‘অ্যাকাডেমি’ ইত্যাদি।
২১। অনেক সাইন বোর্ডে দেখা যায়, ‘কোম্পানী’, ‘কোতায়ালী’, ও ‘ফটোষ্ট্যাট’। এসব ক্ষেত্রে সঠিক বানান হবে, ‘কম্পানি’, ‘কোতোয়ালি’ ও ‘ ফোটোস্ট্যাট’।
২২। বাংলা বর্ণমালায় ‘ঞ’, ‘ন’ ও ‘ণ’-এর জন্যে ইংরেজির ‘N’ হবে। কিন্তু ইংরেজির ‘N’ এর জন্যে বাংলায় কেবলই ‘ন’ হবে। ‘ঞ’ বা ‘ণ’ হবে না। ‘ন’ তার পরবর্তি বর্ণের সাথে যুক্ত হয়ে যুক্তাক্ষর তৈরি করবে না। যেমন, ‘ক্লিনটন’ (ক্লিন্টন নয়), ‘ক্যানটনমেনট’, ‘কনটিনেনটাল’, ‘লনডন’, ‘অ্যানড’, ‘ফ্রেনচ’, ‘বেনচ’, ‘সেনচুরি’, ‘অ্যানজেল’, ‘চ্যালেনজ’, ‘লাউনজ’, ‘মনজুর’ ইত্যাদি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোন বিদেশি শব্দ লিখতে ‘ঞ’ বা ‘ণ’ কোনটাই ব্যবহার করা যায় না।
২৩। অনেকেই শব্দ সংকোচনে ‘ং’ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন ‘কোং’ ‘তাং’, ‘নং’ ইত্যাদি। এ বিধি ব্যাকরণ সম্মত নয়। তাই সংকোচন না করে পুরো শব্দটাই লিখতে হবে। যেমন ‘কম্পানি’, ‘তারিখ’ এবং ‘নম্বর’।
২৪। শব্দ সংক্ষিপ্ত করতে আবার অনেকেই ইচ্ছেমতো ‘ঃ’ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন ‘ডাঃ’ ‘অবঃ’, ‘মোঃ’, ‘লিঃ’ ইত্যাদি। কিন্তু ব্যাকরণে এরকম কোনো বিধান নেই। তাই বিদগ্ধ সম্পাদকগণ এসব ক্ষেত্রে ‘.’ বিন্দুর আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। শব্দগুলো মুদ্রিতাকারে দেখতে খুবই সুন্দর। যেমন ‘ডা.’, ‘অব.’, ‘মো.’, এবং ‘লি.’।
বাংলাভাষায় ‘.’ বিন্দুর আগমন, শুভেচ্ছা, স্বাগতম! সম্পাদকগণ একটি অঘোষিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ‘.’ বিন্দুর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে কোন ফাঁকে বিন্দু যে বিসর্গের স্থান দখল করে নিয়েছে, তার বিন্দু বিসর্গও আমরা টের পাইনি। যখন টের পেয়েছি, বিন্দুর অবস্থান তখন সুগভীরে সুপ্রোথিত। এ বিন্দুই বিন্দু বিন্দু করে দিনদিনই ভাষার শ্রী বৃদ্ধি করে চলেছে। এর কৃতিত্ব সবটাই সম্পাদকদের।
তিনটি বিষয় এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে।
১. বিদেশি শব্দে কখনও ী- কার ূ-কার ও ৃ-কার ব্যবহার করা যায় না।
২. বিদেশি শব্দে কখনও ছ, ঞ, ষ, ণ,ও ৎ বর্ণগুলো ব্যবহৃত হয় না।
৩. স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যতীত শব্দশেষের ী-কার এর ব্যবহার আজকাল অনেক কমে এসেছে।
ভাষাবিদগণ আগ্রহ দেখালে শব্দশেষে ী-কার এর ব্যবহার আরও কমে আসবে। লেখার এ অংশটুকু কপি করে টেবিলের উপর রাখলে, ভাষা প্রেমিকদের বানান সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে বানান ভুল দ্রুত কমে আসবে। ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’, এটা কবির কবিতা! ভালোভাষার প্রতি ভালোবাসার কথা! সে কি কম আনন্দের কথা?
***