কার্তিকের কুয়াশা

 

কবিগুরুর প্রতি

অরুণোদয় কুণ্ডু

বছর বছর মালার ভারে ছবি পড়ল ঢাকা;
প্রভাতফেরীর শঙ্খনাদে, মাইক্রোফোনের দামাল তানে
গাছটা আজ রইল পাখি ছাড়া।
ঘাসের বুকে বাঁশটা গেঁথে, ‘আলোর মুক্তি’ বাল্বে রেখে,
জামায় তোমার কাব্য এঁকে
সার্বজনীন প্রণাম মঞ্চে হয়েছি আত্মহারা।


‘আধমরাদের’ মারব ক ঘা; ‘কোপাইয়ে’ কটা বাঁক?
ডঃ অমুক গান শুনে তোর, সিঁটকান কি নাক?
‘চাঁদের হাসি’ই ভাঙল কি বাঁধ মনের ‘মরা গাঙে’?
‘জনদশেকে তক্তপোশে’ এ সির হাওয়ায় জমিয়ে বসে
ভাবছি আরও কতকিছু নতুন নতুন ঢঙে।


ছেলে বেলায় আসো তুমি স্যারের বেতের দামে,
কৈশোরেতে তোমায় খুঁজি সহায়িকার পাতায়;
না বোঝার অভ্যাসটা রপ্ত হয়ে গেলে,
বড়বেলায় কেতার বুলি খোদাই করি মাথায়।
তাইতো আরব বেদুইনের কাঁধে জলের বোতল!
ক্ষেমঙ্কর পায়না ক্ষমা, দুর্ভিক্ষে শিবতরাই !
গোরা মাথায় শিবের মতো চন্দ্রবিন্দু খোঁজে।
খাতার পাতায় তোমায় লিখি নবযুগের রবি,
তবু সেকেলে সব যুক্তাক্ষর বসাই ওজন বুঝে।


তোতা পাখি মরেনা আর পুঁথির পাতা খেয়ে!
অফিসে সে এক সুরেতেই সাত রাগিণী গায়!
বনের পাখি দিয়েছে ধরা সোনার খাঁচাটিতে,
খাঁচার পাখির সাথে দানা আর পুঁথির পাতা খায়।


এমনি করেই পড়লে বেলা জলকে চলে যাই;
তবু কাব্য কথায় শুধু তোমায়ই ফিরে পাই।
গঙ্গাজলেই গঙ্গাপূজা প্রতি বছর করি,
শুধুই অনুকরণ, কোন অনুসরণ নাই।
এত দেখেও করুনা কি আজ হয়না ওগো কবি?
প্রণাম করি তোমায় সেকি শুধুই তোমার ছবি?

***

খাদ্য ও খাদক

শুভেন্দু দেবনাথ

মধ্যরাতের জ্যোৎস্নায় ভেসে যায় চরাচর
ঠিক তখনই ফুটপাত বদল হয় কোলকাতার
কলেজ স্ট্রীট বেয়ে হেঁটে যাই সোনাগাছি
রাস্তায় রাস্তায় রঙচঙে মুখোশের মুখ
আমরা এখনো খাদ্য খাদকই আছি।
তারা ও আমরা খাদ্য খাদকই আছি
অথবা আমরা কে কাকে দিচ্ছি ফাঁকি
চাহিদার খিদে মিটিয়ে নেবার পর
তাদের চোখের বৃষ্টি দেখেছি কি??
অন্য সময় কেই বা কাকে খুঁজি
আমরা শুধু আমাদের খিদে বুঝি
দিনের আলোয় ছি ছি চিৎকারে
খিদে পেলে ছুটি রাতের অন্ধকারে
ফিরেও দেখিনা ওরা খেলো কিনা তাই
আমরা বুঝি শুধু আমাদেরই খাই খাই

***

স্বপ্নের বাস্তব রূপ

নির্বাসনে এ একা

অনেক দিন ধরে একটি স্বপ্ন গাঁথছিলেম মনে মনে
তোরে নিয়ে অনেক দূর কোথাও হারিয়ে যাব
একটি দিনের জন্য
থাকব নিজেদের মতন করে
হয়তো বনে চলে যাব
হয়ে যাব মোরা বন্য।

অনেকদিন ধরে কল্পনার জাল বুনে চলেছিলেম মনে মনে
একসাথে সারারাত জেগে বসে রব
জ্যোৎস্নায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে চারিধার
আমি তোরে একটু একটু করে
আবিষ্কার করব
বন্য সে জ্যোৎস্নায়।

আজ আমরা দুজনে বসে আছি মুখোমুখি
তবু কথা নেই কারো মুখে
তুই চুপ
আমি চুপ
হাত ধরে হাতে হাতে
চুপচাপ বসে থাকি
একটুকু ছোঁয়াছুঁয়ি
হাতে হাতে ঠোঁটে ঠোঁটে
কত কথা জমা আছে
দুজনার মনেতে
তবু যেন কথা নেই
কারোরই মুখেতে
তুই চুপ
আমি চুপ
বসে আছি ধরে হাত
মুঠো করে হাতেতে।

***

পাপড়ি

সৈয়দ অফসার

মিশে যাচ্ছো অনেক দূরে, স্তব্ধতায় -গোপনে
স্পর্শ-লোভে-প্রাপ্তি কিছুই পাইনি কুশলচক্রে
তিনটি পাপড়ি সাবলীল ভঙিমায় নাড়ালে একাকি
স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারে না অনুভূতি... এতোদিনে
তারাও জেনে গেছে-
একই বৃন্তে ঘুরে নিজ গৃহকোণে মৃত প্রায় আমি

বলছি পরাগ রেণু, কোথায় পাবে এতো এতো
মৌমাছি?
সে কথা শুনলে তুমি হাসো
হাসতে হাসতে কিছু একটা বলো
কাঁধে রেখে হাত,বাকিটুকু থামাও

নিজের তাগিদে বীথি ছড়ালে আশে-পাশে চিরদিন
আমাকে কোন দোষে জড়াতে চাও? ফেলে আসা দিন
***

ফুল পাঠাবো তোমার হাতে

আবদুল হাকিম

[কবিতাটিতে ঈ, ঊ, ণ, ং, শ –এ পাঁচটি অক্ষর ব্যবহার করা হয়নি]
টেলিফোনে কথা হল l
তুমি আসছো l
তারপর-
সময়টা কাটলো বেস l
পাচ্ছি কিছু কবিতার বই l
সিডি’' তে বাঁসি l একতারা -দোতারা l


রিসিভ করতে গিয়ে হোচট খেলাম l
তোমার কপালের টিপটায়
জ্বলজ্বল করছে
সহিদ মিনারের রক্তলাল সুর্যটা l
ঘড়িটায় চোখ ফেরাই l
দেখি -
সাতটি স্তম্ভ ভাজে ভাজে উঠে এসে
গড়েছে স্মৃতি সৌধটি l

বুকের ভিতর বাজলো আবার
রক্ত অর্কেস্ট্রা l
ভাবছি, ফুল পাঠাবো l
তোমার হাতে l