কার্তিকের কুয়াশা

 

মাগো, আরেকটিবার ডাকবে কী আর
কালপুরুষ

মাগো- আরেকটিবার, ডাকবে কী আর?
"ওঠরে খোকা ওঠ, ঘুমোসনে আর,
সময় বুঝি এসেছে তোর যুদ্ধে যাবার।
ঐ দেখ চেয়ে শত্রুরা সব আসছে ধেয়ে, শুয়োরের পাল;
নে হাতে নে, গাঁইতই-শাবল, দে ফুঁড়ে দে বুকটা তাদের- মিটিয়ে ঝাল।
তুই যে আমার মাণিক-রতন, আমার বুকের আদরের ধন,
দেশের বিপদ এলেই তোকে সঁপে দেবো করেছি পণ"।
মাগো- আরেকটিবার, ডাকবে কী আর?
সেই যে আমি তোমার ডাকে যুদ্ধে গেলাম-
শত্রু বধে হানবো আঘাত শপথ নিলাম,
বৃষ্টি-রোদে, ঝড়-বাদলে, শীতের রাতে ঠান্ডা জলে,
ওঁত পেতেছি, চোখ রেখেছি, শুয়োরের পাল আসবে কখন দলে দলে।
এক এক করে করবো খতম কেঁচকি মারে,
দেখবে ওরা, বিচ্ছুরা আজ সবই পারে।
আমার দেশের মাটি ওদের ছাড়তে হবে, ছাড়তেই হবে,
নইলে ওদের পশুর মতো মরতে হবে, মরতেই হবে।
মাগো- আরেকটিবার, ডাকবে কী আর?
এবার যদি জাগতে পারি, পার পাবেনা শত্রুরা আর।
শহীদ ছেলের রক্তবীজে জ্বলছে আগুন চিতার মতো,
ফিরিয়ে দাও অস্ত্র আমার, দেখি তাদের শক্তি কতো!
শুয়োর যারা লুকিয়ে আছে বন-বাঁদারে চোরের মতো,
খুঁজে খুঁজে আনবো ধরে, গুঁড়িয়ে দেবো ইচ্ছেমতো।
মাগো- আরেকটিবার, ডাকবে কী আর?
অপরাধী ছিল যারা, বিচার তাদের হবেই এবার।
লক্ষ-কোটি ছেলে তোমার জোট বেঁধেছে দেখো চেয়ে,
পালাবে কোথায়! পিশাচগুলো মা-বোনেদের রক্তে নেয়ে।
গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারে সবাই এখন জেনে গেছে,
আমার দেশের শত্রুরা সব মুখোশ পড়ে লুকিয়ে আছে।
মাগো, তুমি ডেকেই দেখো, মৃত্যু ভুলে আসবো ফিরে,
শ্যামল-সবুজ মাটির বুকে ভালবাসায় থাকবো ঘিরে।

***



ঘৃণা
নির্বাসনে এ একা


২৫শে মার্চ
কালরাত্রি নেমে এসেছিল জীবনে এক
অনেক অনেক কাল আগে
সেই ১৯৭১ এ।



বর্বর কিছু নরপশুদের তান্ডব
হায়েনা রূপী মানুষের নগ্ন উল্লাস
কেড়ে নিয়েছিল সেদিন হাজার লাখো প্রাণ
ছিল তারা আমারই চারিপাশের মানুষগুলো
কিংবা আমাদের পূর্বপূরুষ
তারা হয়তোবা আমাদেরই কারো বাবা
কারো ভাই, কারো বোন বা কারো মা
ঘূনিত নরপশুদের তান্ডবলীলায়
সাঙ্গ হয়েছিল কিছু প্রস্ফুটিত জীবন
আর লাখো বিধবার মনে চিরতরে
একে দিয়েছিল শহীদের রক্তের তাজা লাল ঘা।


রাজারবাগ পুলিশ লাইনের
হাজারো পুলিশ ভাইয়েরা সেদিন
মেশিনগানের শব্দে তালাবদ্ধ কান
লুটিয়ে পড়ছে এদিক সেদিক
বোবা চাউনিতে চেয়ে আছে
পাশের সৈনিকের
ঢলে পড়া লাশখানি বুকে করে
হয়তো নিজের বুক বেচেছিল
বুলেটের ঝাঝরা আঘাত হতে।



ভারী ট্যাঙ্কের ঘরঘর ঘসটে চলা
ঢাকার রাজপথ দিয়ে
কার্জন হল, শহীদ মিনার
ঢাকা ভারসিটির বুক চিরে
কান ঝালাপালা করা গুলির শব্দ
থেমে গিয়েছিল হাজারো নিরাপরাধ
খেটে খাওয়া মানুষের প্রান
স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কত শত না
তরুন তরুনীর হাস্যোজ্জল মুখগুলি চিরতরে
ওই হিংস্র হায়েনাদের নরতান্ডবের মাঝে।



আমি বেচে আছি আজো
বেচে আছ তোমরাও
যে যার মত করে
হৃদয়ের গভীর থেকে কি একটিবার
ঘৃণা উদগীরণ করেছি আমরা
ওই নরপশুদের তরে?



আজো খেলার মাঠে দেখি
পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ হাতে
আমারই দেশের মানুষ
উল্লাসে মেতে ওঠে
ওইদেশেরই বিজয় আনন্দে
যার বাবা বা চাচা
শহীদ হয়েছিল ১৯৭১এ
হয়তোবা এই খেলোয়ারদেরই
কোন পূর্ব পূরুষের হাতে।



ধিক জানাই আমি
ঘৃণা ভরা মনে
আমার দেশের ওই সব মানুষের তরে
যাদের হাতে আজো ওড়ে
পাকহানাদের ঝান্ডা
হোক সে খেলার মাঠে
কিংবা অন্য কোথা।
***


“সূর্যমুখী”
মিলি দাস

সূর্যমুখী
সকালের স্নান করা রোদে
সতেজ সূর্যকে দেখে যায়
ধীরে ধীরে ফোটে
বহ্নিশিখা
সূর্যমুখী

শুধু সূর্যকে চেয়েছিলে
তবু অলিরা তোমায়
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
দাহ করে তাদের স্পর্শে
তোমার নিষ্পাপ দেহে
প্রত্যেক রন্ধ্রে
জ্বলে আগ্নেয়গিরি
সূর্যমুখী

গঙ্গাবক্ষ বহুদূর
মধ্য আকাশে সূর্য
নেই শিশির, নেই কুয়াশা
শুধু বয়ে চলে লু
ধির, ক্লান্ত
মস্তক অবনত
সূর্যমুখী

সীতা-র পাতাল ছিল
মাতৃরুপী ধরিত্রী
সূর্যমুখী
তুমি ঝরে যেও
যখন আসবে রাত্রি
নিশ্ছিদ্র প্রেম
মিশে যাক পাতালে

অকারণে কলঙ্কী আত্মা
উড়ে যাক চাঁদে
দু মুঠো রোদ
যদি পরে কাঁধে
উজ্জ্বল হয়ো
সূর্যমুখী
নিস্পাপ আবেগে
***


 জিজ্ঞাসা অশেষ
পার্থসারাথি ভৌমিক

কোত্থেকে লাফ দিয়ে
প্রগলভ হালুম
আদ্যন্ত হা ;
জিহ্বা লকলক !
অশনি শিহরন জাগে
মুহূর্তে সর্বাঙ্গে ,
দোল -ধাক্কা চেতনায় ;
মা -মুখ আঁচল
দিয়ে ঢাকবো চোখ ,
সরো , - সরে যাও
এক্ষুনি যন্ত্রণা !!

সেই কোন শিশুকাল
স্বপ্ন কর্ষণের,
শুভেচ্ছারা চারদিক
কলকল, মুখর -
হাসি -গান -প্রান ।

একখানা জামদানী
এগারো হাত পার হ'য়ে ,
পাড় হ'য়ে এপার -

অম্নি কোত্থেকে লাফ-
প্রগলভ হালুম ;
রাত্রি-ঘুম কেড়ে নেয় ,
দিবস- ও অন্তহীন !
আমাকে ডেকোনা তোমরা -
যাও , -সরে যাও !
অতলান্ত খাদ !
মাধ্যাকর্ষণ !
সাঁ -সাঁ অন্ধকার !!

কেন আমি অন্তর্বর্তী ?
অন্তর্ধান নেব কেন ?
কেন আমি একক চেতনা ??

অনাদি জিজ্ঞাসার
প্রত্যুত্ত্বর আকর্ষণে -
একবার কণ্ডরার
সর্বশক্তি নিয়ে
দণ্ডায়মান আমি ;
হেঁটে যাবো সমান্তরাল -
আরও কিছুকাল ।

অনন্ত জিজ্ঞাসার
না পাওয়া উত্তরের তৃষা
দিয়ে যাবো বুকে
পরের প্রজন্মকে ,

যদি খোঁজ পায় !!
***


তারার আলো
কোয়েল সাহা

এক একটা দিন আসে এরকম
ইচ্ছে হয় সব বদলে দেব, বদলে যাব নিজে
পরের সকাল মুচকি হেসে কেবল বলে, চল,
চলতে থাকো, থেমনা কোনো কাজে।
এক একটা দিন রোদের হাসি,
মন জুড়িয়ে দেয়
আবার এক একটা দিন
রোদের আলোয়
জীবন ফুরিয়ে যায়
কিছু রাত ফুল ফুটলেই দিনের সুবাস গায়ে
আঁধার কালো রাতেও
যেন রামধনু দেখায়।
পড়ন্ত বিকেল এলে, ছায়া বারান্দার কোণ
চায়ের চুমুক, পথ চাওয়া চোখ, ভারক্রান্ত মন।
আবার কিছু ফুটবে তারা,
আরো তারার মাঝে,
তারা রাও নাকি যখন তখন বন্ধু খুঁজতে আসে।
পরের সকাল আসুক আবার,
এই আশাতেই সুখ
সকল তারার মাঝে জ্বলুক সন্ধ্যাতারার মুখ!!!!!!!!
***



ক্যালেন্ডারের পাতায়
আবদুল হাকিম
বাল্টিমোর, ইউ এস এ
[লেখাটিতে ঈ, ঊ, ণ, ং, শ –এ পাঁচটি অক্ষর ব্যবহার করা হয়নি-আবদুল হাকিম]
ক্যালেন্ডারের দ্বিতিয় পাতায়
একুস ছিল।
আমার মনিটরে কবিতা এল।
ক্যালেন্ডারের তৃতিয় পাতায়
ছাব্বিস।
আমার ক্যানভাস/ ক্যামেরা জিবন পেল।
ক্যালেন্ডারের সেষের পাতায়
যখন ষোলো
আমার ব্যান্ডে উঠ্‌ল ঝড়। উঠ্‌ল।
 
মার্চ ০৪ ২০১২
***