সম্পাদকের ডেস্ক থেকে
রক্ত মোছা রুমাল
একুশ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। বিকেল বেলা। শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে ছাত্ররা চতুর্দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে রশিদ বিল্ডিং এর কাছ দিয়ে, খন্ড খন্ড মিসিল নিয়ে এগিয়ে চলেছে। পোগোজ হস্টেল থেকে আমরা ক’জন ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ দিয়ে এসে বর্তমান মেডিক্যাল কলেজের সামনে মিসিলে অংশ নিলাম। বর্তমানে যেখানে শহিদ মিনার, সেখানে ছিল ব্যারাক। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা সেখানে থাকতো। খন্ড খন্ড মিসিল একত্রে এসে, একটি বড়ো মিসিলের রূপ নিল। স্লোগান ছিল,'রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই '। এরই মধ্যে পুলিস-এর গাড়ি এসে মিসিলের উপর টিয়ার গ্যাস ছুড়তে শুরু করলো। আমি চোখে রুমাল (সবুজ রং-এর) ধরে ব্যারাকের দিকে যেতে চেষ্টা করলাম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমরা মাটিতে শুয়ে পড়লাম। তখন দেখি একজনের মাথা ও শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে। বোধহয় ছাত্র হবে। গুলি খেয়ে পড়ে গিয়ে ছটফট করছে। আমার হাতের সবুজ রুমাল দিয়ে ছাত্রটির গায়ের রক্ত মুছে দেবার চেষ্টা করলাম। রক্ত বন্ধ হয়না। তার গায়ের রক্ত এসে আমার জামা কাপড়ে লাগলো। তারপরই ক’জন লোক এসে মৃতপ্রায় ছাত্রটিকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। সবুজ ঘাসের উপর দেখলাম ছোপ ছোপ রক্তের বৃত্তাকার ছাপ। আজকে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার যে রঙ, ঠিক তাই। তখন কে জানতো, এই ভাষা আন্দোলনই একদিন স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ নেবে? কে জানতো, সবুজ ঘাসের উপর শহিদের রক্তের লাল দাগ একদিন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় স্থান পাবে? সেদিনের রক্ত মোছা সবুজ রুমাল, হারিয়ে গেছে আজ কতকাল! কিন্তু সবুজের বুকে লাল, সে তো উড়বেই চিরকাল!
লে. কর্নেল অব. ডা. হাফিজ আহমেদ ময়মনসিংহ, ২২২০ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১২
editor@kartiker-kuasha.nauba-aloke-bangla.com