কার্তিকের কুয়াশা

 

একুশের উত্তরাধিকার
ডা. এম এ হাসান

বিবর্ণ পাঞ্জাবী পরা একজন শহীদের স্বজন, অতি আপন
পায়ে পায়ে ভিড় ঠেলে কায়ক্লেশে বেদিমূলে দিলেন ফুলের ভূবন
ঘটনাটা ঘটেছে আজ অপূর্ব নামের শিশুটা মারা গেছে যখন
আরো কত মৃত্যু! কত আগুন! বিষাদের মাঝে রক্তাক্ত ফাগুন
অমর একুশে আজ -

আজি হতে অর্ধশত বছর আগে ভাষার জন্য কতিপয় মানুষ
এই জনপদে, লাল পলাশের নীচ, আম্রকানন ঘেরা রাজপথে দিয়েছিল প্রাণ,
একুশের সকালে তাদের যেন দেখেছি আমি, নীল মেডিকেলে অটুট অম্লান,
মায়ের চিঠি আর প্রেমিকার নামাঙ্কিত রুমাল হাতে এক পলক দাঁড়াতে
ভীষণ তারা আজ, চারিদিকে সাজ সাজ, হায়েনারা একে একে মুছিছে প্রাণের অক্ষর
আর কিছুক্ষণ পর, তারা পুড়িয়ে ছাই করে করে দেবে আমার প্রাণের ভাষা
আকাশ কুসুম, আমার মর্মমূল; আমার সবটুকু আশা
তারপর নান্দীরোল, এতক্ষণ অপেক্ষা নয়, হোকনা জীবনের সবটা ক্ষয়!
মায়ের চিঠি, বিবর্ণ বর্ণমালা, আর প্রেমিকার সাদা রুমাল হাতে দাঁড়ায় তারা
শত হাতে হাত, সেদিনের সেই আম্রতলায় প্রাণের প্রপাত, ভুলিবার নয়
কে এক ভাইয়ের রক্ত ঝরেছে, কার যেন পাঞ্জাবী পতাকা হয়ে উড়েছে,
তাতে কোন দ্বিধা নেই; অনড় বর্ণমালা হয়ে তারা সবাই দাঁড়িয়েছে।
পৃথিবীর সব পাখি, সকল মানুষের ভাষায় তারা বলেছে
এতটুকু আর, দেবনাকো ছাড় মাতৃভাষার, নদীর মতো ছল ছল করে
বলে যাব কথা আপন ভাষায়
আর নয় ভাষায় কলঙ্ক লেপন, রক্ত ঝরানো নয় বর্ণমালার দেশে
আর নয় দুর্বিষহ শাসন, নয় দানবিক শোষণ
নয় অন্ধ বিসংবাদ, সুপ্তির স্বরগ্রামে নয় কোন প্রমাদ।
সব কটা জানালা খুলে দিয়ে লাখো শহীদের সাথে
মসকরা আর নয়, তন্ময় রাত্রিদিনে সে যে চির বরাভয়
ফাগুনের সূর্যোদয় থেকে অঘ্রাণের রন্ধ্রহীন দিন
স্পন্দিত হোক মোর বীরের হৃদয়ে কেটে যাক সকল তিমির
চৈতন্যের সৈকতে আঁকা হোক তারই উত্তরাধিকার।
***

একুশে ফেব্রুয়ারি
ফিরোজা হারুন

২১ শে ফেব্রুয়ারি
৮ ই ফাল্গুনে এসেছিলে তুমি
পলাশের মালা পরি’।

সেই কবে
’৫২–র পড়ন্ত বিকেলে
রমনার মাঠে জড়ো হয়েছিলে
বাংলার দামাল ছেলে।

দস্যু করে ধন লুন্ঠন, তস্কর করে
সামান চুরি
ভাষা লুন্ঠন?
শুনিনি কখনো
এ জগতে নেই জুড়ি!

ভাষার জন্য প্রাণ দিল যারা
অকৃপণ অকাতরে
সাহসের বীজ বুনে দিল তারা
শহীদ মিনারে।

বাংলার ছেলে প্রাণ দিয়ে গেল
মায়ের ভাষার তরে
সোনার আঁখরে লেখা রবে নাম
বাংলার ঘরে ঘরে।

সালাম বরকত রফিক জব্বার
শফিক আরো কতজনা
দিনে দিনে কত রক্ত দিয়েছে
নাম তার নাই জানা।

ত্যাগের শীর্ষে উচ্চে উঠিল
বাঙ্গালী বীর সেনা
(আজ) শুধিতে হচ্ছে রক্তের ঋণ
আরো ছিল যত দেনা।

মায়ের মুখের ভাষার জন্য
দিয়ে গেল যারা প্রাণ,
গাইবো তাঁদের গৌরব গাথা
রাখবো ভাষার মান।
***
দীপান্বিতা
সাবরিনা সিরাজী তিতির

কাল ঈশ্বর আমায় ডেকে পাঠালেন , আমায় বর দিতে চান ।
কেন কি কারণ কিছু বুঝলাম না ; অবাক আমি !
আমি কিছুতেই ভেবে পাই না কি চাইবো ,
অনেক ভেবে তোমার ইচ্ছে পুরণ চাইলাম ।
একটা ছোট্ট দেব শিশু চাই আমি ,
স্বর্গের উদ্যানে ফুটে থাকা নীল অপরাজিতা এনে হাত ভরিয়ে দিলেন তিনি ।
ফুলগুলো হাতে এসেই যেন খিলখিল করে হেসে উঠলো ,
চট করে ঘুম ভেঙে গেল তোমার স্পর্শে -
কানে তখনও ঝমঝম করে বাজছে অপার্থিব হাসি ।
মনের মধ্যে কে যেন ডেকে উঠলো ' মা ' !!
মুহূর্তে পৃথিবীর সব বাজনা একসাথে বেজে উঠলো !
আমি ওর নাম রাখলাম ' দীপান্বিতা ' ,
আমার ছোট্ট দীপান্বিতা !!
আমি তাকে দেখতে পাই ; কি অসম্ভব মায়াময় দেখতে !
ঝুঁটি দুলিয়ে হেঁটে বেড়ায় উঠোন জুড়ে ,
নিজের মনে কি কথা বলে সারাদিন !
এত্ত কথা শিখেছে মেয়েটা ! ঠিক তোমার মতো ,
তুমি হাসো , বলো - বাবার মেয়েতো বাবার মতই হবে ।
তোমার ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় আমায় ,
অদৃশ্য শিশুটি কেমন পূর্ণ করে দিয়েছে আমাদের !
দীপান্বিতা মামনি , খুব অপেক্ষা করে আছি তোর জন্য ,
তোর বাবাই টা কেমন বদলে গেছে ,
রাস্তায় কোন শিশু দেখলেই ফোন -
বিলবোর্ডে ও তোকে খুঁজে বেড়ায় ।
স্বপ্ন দেখে তোকে কাঁধে নিয়ে বাড়ির পুকুর পাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ,
কি বলে জানিস , একটা হাতির বাচ্চা নাকি কিনবে তোর জন্য !
মা' রে খুব ভালবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছি ,
দুটো মানুষ অন্ধকারে হাতে হাত রেখে বসে আছি ।
দীপান্বিতা 'র আলোতে আলোকিত হবো ,
পৃথিবীকে ডেকে বলবো , দেখো , আমাদের মেয়েকে দেখো ,
এই আমাদের দীপান্বিতা !!

৩০.০৯.২০১১.
***

было....

by Elena Mia Elena
on Monday, February 13, 2012 at 10:00pm

Я стою на краю.
Я Не значу ничего.
Последняя пролита слеза.
Я больше не заплачу.
Последний взгляд.

Смотрю, но ничего не вижу.
Я помню лишь одно, как ты шепчешь «ненавижу»
***
পালকি
পার্থসারাথি ভৌমিক

নীতিমুন্ড ক্ষয়ে যাচ্ছে রাজনীতি দাঁতে
পাকস্থলী পাষণ্ডের প্রতারণা চাকা,
ব্যবহার বহুব্রীহি মঞ্চ মাতাতে-
কি নিপুন বিঁধে যাচ্ছে সংশয় শলাকা-

আহা কি নিপুন বিঁধে যাচ্ছে সংশয় শলাকা !!

সিঁধে যাচ্ছে নক্ষত্র-ব্রীড়া মাটির গভীরে,
অক্ষত্রিয় অন্ধকারে-
নতুন খোলসে সাজছে সাপ-সরীসৃপ
সময় সংহারে ।

ছোবলে অসংজ্ঞ সমাজ সম্বিৎ ফিরাতে
পদব্রজে তবু কিছু বেহারা অব্যয়-
উদ্ভিন্ন সূর্যের প্রতিবেশ খুঁজে দিতে
পাল্লা দিচ্ছে ; পালকিতে অসময় ।।
***
আবার, আরও একবার
বেদানুজ চক্রবর্তী

সূর্য্যি তখন পাটে,
একলা বালক দাঁড়িয়ে ছিল হলদী নদীর ঘাটে ।
নৌকো তখন ভাসতেছিল
নদীর জলও হাসতেছিল
হঠাৎ এল হারিয়ে যাবার করুণ আমন্ত্রন ।

পার হবে , কি ভাসবে ,
বালক ভাবতেছিল মনে ;
অচেনা সুখ সামনে যখন ,আনাড়ি সেই ছেলে -
হাতের মুঠি আলগা করে
ভাসিয়ে দিল জলে -
বহুকালের জমিয়ে রাখা পাখির বুকের পালক ।

একলা ছিল ,একলা গেল ,মধ্যবিত্ত বালক ।
***
‘অন্তরে বাহিরে তাই খুঁজিনাতো আর’

সনাতন দাস

হেথা হোথা যথা তথা
বৃথা খুঁজি কারে
বাহিরে
অন্তরে
যে জন রয়েছে
সে যদিনা থাকে
তবে
এই দেহ
খুঁজে ফেরে কে বা কাকে ?
না বুঝে
বোঝাব কাকে
কোন সে কারণ ভিন্নতায়
যে মন যেমন
ভাবে -
আসে সেই ক্ষণ
বোঝাতে নিয়ম
তাকে কে বেঁধেছে
কোন নিয়মে
না জেনেই ।।
***

এক ধরণের বন্দি দশার মধ্যে আছি
সাগর জামান

কেবল বিপন্ন বিস্ময়ে বিচূর্ণ হই তবু বিস্ফরিত হতে পারি না।
বিক্ষোভে ফেটে পড়ে না কবিতার কন্ঠ
নির্বিকার নিরাসক্ত জীবনে
অভ্যস্ত হয়ে গেছে সবাই-আমিও
রাজনীতির মাঠে সংঘাতময়তা বেড়ে যায়
মানুষের প্রতিপক্ষে মানুষকে দেখে বিপন্ন বিস্ময়ে বিচূর্ণ হই
তবু বিশুদ্ধ বিক্ষোভে বিদগ্ধ হয় না কিছুই।
অশুভতার তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় শোভিত বাগান।
বিহ্বলিত স্বদেশের মুখ দেখে ম্রিয়মান হয়ে যাই আমি তবু কিছু
গৌরব সগৌরবে প্রেরণার বানী শোনায়।
বিপন্ন বিস্ময়ে শুনে যাই আমি
তবু বিক্ষুব্ধ হতে পারি না।
এক ধরনের অক্ষমতার বেড়াজালে কেবলই
আটকে যাই আমি আমার জীবন।